চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রথম টিউব ভার্চুয়ালি উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্যের উদ্বোধন উপলক্ষে সর্ব প্রথম সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম শহর বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম একসময় অবহেলিত অবস্থায় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে রুপ নিয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থায় আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি এবং পারব। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ১০০টি অঞ্চল চিহ্নিত করেছি।
নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন ও সঞ্চয় করতে হবে। তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যোগাযোগ নেটওয়ার্ক করেছি। বিনামূল্যে করোনা টিকা দিয়েছি। নিম্নবিত্ত ৫০ লাখ মানুষের জন্য ১৫ টাকা দরে চাল দিয়েছি এবং বৃদ্ধের জন্য বিনামূল্যে চাল দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১-২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। উন্নয়ন যাদের চোখে পড়ে না তাদের চোখে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি।
টানেল নির্মাণে চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ টিউব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় পতেঙ্গা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে উদ্বোধন করেন।
এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন প্রান্তে সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতির বক্তব্যে বলেন, পদ্মা সেতুর পর এটি একটি অনন্য মাইলফল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ সারাদেশ উন্নয়ন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছি। চট্টগ্রামের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একটি মায়াবী টান আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওরা সমালোচনা করুক আমরা উন্নয়ন করে যাব।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, সেতু বিভাগের সচিব মোঃ মনজুর হোসেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। চট্টগ্রাম প্রান্তে চট্টগ্রামের মন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ মমিনুর রহমান সহ সরকারের উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও টানেল সংযুক্ত এলাকার জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম যোগাযোগের পথের (টানেল) দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের খননকাজ আগেই শেষ হয়েছে। এরমধ্যে টানেলের দক্ষিণ (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) সুড়ঙ্গের পুরোপুরি কাজ—খনন, ভেতরের সড়ক নির্মাণ ও সাজসজ্জা সম্পন্ন উপলক্ষে আজ দিনটি উদ্যাপন করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী উত্তর সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৪৬ মিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) খননকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ অক্টোবর এ কাজ শেষ হয়। টানেলেরল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।
এরমধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি।