উসমানি উদ্যান, নাম তার গোসসা নিবারণী পার্ক। নগরবাসীর রাগ বা গোসসা কমাতে ২০১৮ সালে শুরু হয় সংস্কার কাজ। ২৯ একর জায়গার উপর তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। নয় থেকে দশ মাসের মধ্যে ছিল কাজ শেষ করার কথাও। ৩০ মাস পার হলেও এখনো শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। নানা কারণে বাতিল করা হয়েছে পূর্বের টেন্ডার, নেয়া হচ্ছে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের জরিমানাও।
আর নতুন টেন্ডারে শিগগিরই শুরু হবে পার্কের কাজ। চলতি বছরেই বাকি থাকা ৩০-৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করার প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের। অথচ বন্ধ থাকা পার্ক এখন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে একঘেয়েমি আর অবসাদ না কমলেও গোসসা নিবারণী পার্কই যেন গোসসা করে রয়েছে। আমাদের গোসসা কবে ভাঙ্গবে বা কবে শেষ হবে পার্কের কাজ এমন হাজারো প্রশ্ন নগরবাসীর।
তারা বলছেন, গোসসা নিবারণী পার্কে যেতে না পারলে আমাদের গোসসা বা রাগ কীভাবে কমাবো? দ্রুত পার্কের কাজ শেষ করে তা খুলে দেওয়ার দাবি তাদের।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি গোসসা নিবারণী পার্কের (উসমানি উদ্যান) নির্মাণ কাজের উদ্ধোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ত্রিশ মাসেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। ফলে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ থাকা পার্কটি এখন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আগাছায় উদ্যানটি এখন ভয়ংকর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
এ সুযোগে সেখানে দিন-রাতে হচ্ছে অসামাজিক কার্যকলাপও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, পার্কটির সংস্কার কাজ প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নানা কারণে পূর্বের ঠিকাদারদের টেন্ডার বাতিলও করা হয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে মোটা অংকের জরিমানাও। নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসেই কাজ শুরু করতে পারবেন এবং চলতি বছরেই কাজ শেষ হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
ডিএসসিসি আরও জানায়, নাগরিকদের মন ভালো করতে বা গোসসা নিবারণ করতে পার্কটিতে থাকছে আলাদা আলাদা বসার জোন, বাচ্চাদের জন্য বিশেষ জোন ও বিভিন্ন রাইডস, ওয়াকওয়ে, লেক-যেখানে সারাবছরই পানি থাকবে, ওয়াশরুম, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, লাইব্রেরীসহ নাগরিকদের মন ভালো করতে বা গোসসা নিবারণ করতে পার্কটিতে থাকছে সব ধরণের সুযোগ সুবিধাও। এছাড়াও পার্কটিতে বাউন্ডারি করাসহ ভিতরে নতুন নতুন গাছ লাগানোও হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গোসসা নিবারণী পার্ক (উসমানী উদ্যান)। উদ্যানটির দক্ষিণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন, আর উত্তরে বাংলাদেশ সচিবালয়। একদিকে দীর্ঘসময় ধরে পার্কটি বন্ধ অন্যদিকে সংস্কার কাজও বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে পার্কটি এখন একটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি বাউন্ডারি দেয়া টিনগুলোও ভাঙ্গাচুরা ও নষ্ট হয়ে গেছে। ভেতরে সহসায় আসা-যাওয়া করছে ভবঘুরের দল। দলবেধে সেবন করছে মাদক। নেই নিরাপত্তার বালাই, ভেতরে প্রবেশ করলেই ঘা আতকে উঠার মতো দৃশ্য চোখে পড়ে।
এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন পরিস্থিতি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীবাসী বলছেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দীর্ঘসময় পরেও পার্কটির কাজ শেষ হচ্ছে না এবং চালুও হচ্ছে না। বন্ধ পার্কে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে সব অপকর্ম।
পার্কের পাশে বসে দোকান করছেন এমন কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, বাউন্ডারি দেয়া টিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি নেশাগ্রস্থতরাও টিনগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সহজেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে মাদকসেবীরা। পাশাপাশি সন্ধ্যা নামতেই ভিতরে প্রবেশ করছে বহু পতিতা। আর দিন-রাতে সবসময় মাদক ব্যবসায়ীরা সহজেই মাদক সরবরাহ করছে।
বিভিন্ন কাজে প্রায় নগর ভবনে ও পুরাণ ঢাকায় আসেন রাসেল হাওলাদার। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, এতো ব্যস্ত এলাকায় বসার জায়গা পাওয়া যায় না। আগে পার্কে বসে বিশ্রাম নিতে পারতাম, বন্ধ থাকায় তা আর হচ্ছে না। দ্রুত কাজ শেষ করে পার্কটি চালু করার দাবি জানাচ্ছি। একই কথা জানালেন পুরাণ ঢাকার বাসিন্দা আলফাজ হোসেন। তিনি বলেন, শুনছি এ পার্কে আসলে নাকি মন ভালো হয়ে যাবে বা রাগ কমে যাবে। কবে কর্তৃপক্ষ আমাদের গোসসা কমাবে?
এ বিষয়ে (ডিএসসিসি) প্রকল্প পরিচালক মো. খায়রুল বাকের আমার সংবাদকে বলেন, এখনো ৩০-৩৫ শতাংশ কাজ বাকি আছে। ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হবে এবং চলতি বছরেই পার্কের কাজ শেষ হবে। সেখানে নাগরিকদের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকছে। পার্কে প্রবেশে কোন টিকেটিং ব্যবস্থা থাকছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, পার্ক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে টিকেটিং সিস্টেম থাকবে কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ আমার সংবাদকে বলেন, এ উদ্যানের দুই বা তিনজন ঠিকাদার আছে। সবগুলোকে জরিমানা প্রস্তাব দিয়ে মেয়রের কাছে ফাইল দিয়েছি। উনি তা অনুমোদন করেছে। তাদের একেকজনের জন্য অনেক জরিমানা হচ্ছে, কোটি টাকার উপরে জরিমান হবে। পাশাপাশি উদ্যানের কাজের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আবার যৌথ পরিমাপ দিয়ে পরবর্তী কাজের জন্য কী লাগবে তার একটা এসেসমেন্ট প্রায় শেষের দিকে। এককথায় নতুন করে আবার টেন্ডার করে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে। এছাড়াও পার্কটি বন্ধ থাকায় সেখানে মাদকসেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে। এটি সম্পত্তি বিভাগ দেখছে। তারপরও আমরা দেখবো, এমনকি মেয়রের কাছেও এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। এ পার্কের চারদিকে এত সুন্দর অফিস রয়েছে, কিন্তু এ নির্জন জায়গাটা এখন একটা ভীতিকর অবস্থায় রয়েছে। সবমিলিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহয়াতায় সেখানের বিষয়টি দেখবো।
টিএইচ