একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন থেকে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে সকলকে একযোগে এক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নমূলক কাজগুলোর সফলতা অন্যদের যেমন কাজে লাগবে, তেমনি অন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নমূলক কাজগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাতেও কাজে লাগবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) থাইল্যান্ডের পাতায়া এক্সিভিশন এন্ড কনভেনশন হলে পার্টনারশিপ ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট (পিপিডি) আয়োজিত বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধি পর্যায়ের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক ১৯তম আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকার পর্যায়ের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২২ সালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এক দশমিক ২২ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শিশুমৃত্যু হার প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে ২০০৯ সালে ২৮ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৫ জনে নেমে এসেছে।
২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে প্রায় ৫০ ভাগ শিশু মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৪ ভাগ নারী (১৫-৪৯ বছর বয়সী) গর্ভনিরোধ পদ্ধতিসেবা সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাচ্ছে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৯ সালে প্রতি লাখে ২৫৯ জন থেকে কমিয়ে এখন ১৬৩ জন হয়েছে।
শিশুদের সময়মতো ভ্যাকসিন প্রদান করে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাভী কর্তৃক ভ্যাক্সিন হিরো পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়নের স্বীকৃত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার, ২০১১ সালে ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট নামে সাউথ-সাউথ পুরস্কার পাওয়াসহ নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
করোনা মোকাবিলা করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম স্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গঠনমূলক কাজ করার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের এই সফলতা অন্যদেরও যেমন কাজে লাগবে, তেমনি অন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নমূলক কাজগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাতেও কাজে লাগবে। এভাবে, একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন থেকে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে সকলকে একযোগে এক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দরিদ্রপিড়ীত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি পেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, করোনা পরিস্থিতি, বিনামূল্যে হাসপাতাল সেবা কার্যক্রমসহ স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জিম্বাবুয়ের উপ রাষ্ট্রপতি, ভারতের মিনিস্ট্রি অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ফ্যামিলি প্লানিং অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ডিভিশনের অ্যাডভাইজার, দ্যা রয়েল থাই গভারমেন্টের মিনিস্ট্রি অব পাপলিক হেলথের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের মহাপরিচালক, ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল পপুলেশন অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং বোর্ডের চেয়ারপার্সন, চীনের ভাইস চেয়ার এবং ভাইস মিনিস্টার ন্যাশনাল হেলথ কমিশনার, ইথুপিয়ার স্টেট মিনিস্টার, উগান্ডার মিনিস্টার অব স্টেট ফর ফাইনান্স, প্লানিং অ্যান্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট এবং পিপিডির বোর্ড মেম্বার, ঘানার ন্যাশনাল পপুলেশন কাউন্সিল রিপাবলিক অব ঘানার এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এবং পিপিডির বোর্ড মেম্বার, পাকিস্তানের মিনিস্ট্রি অব ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস, রেগুলেশন্স অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশনের মহাপরিচালক, সেনেগালের মিনিস্ট্রি অব হেলথ অ্যান্ড সোসাল অ্যাকশনের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার টু দ্যা মিনিস্টারসহ ২৭টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।
সভায় নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ দেশের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা, শিশু শ্রম বন্ধ করা, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিগণ এসকল বিষয়ে একমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্র প্রতিনিধিগণ তাদের নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য প্রজনন সেবার উন্নয়ন চিত্র ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত এক দেশ অন্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিজ দেশে কাজে লাগাবেন বলে জানান।
সভায় সব দেশের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি কনসেনসাস ডিকলারেশন পেপারস স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ্য, ২৭টি দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠন পিপিডি এর প্রধান কার্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানীর আগারগাঁও-এ স্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশে নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেনিয়ার নাইরোবি সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উদ্যোগ নেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান মন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি পিপিডি কার্যালয়টির কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।
বর্তমানে সদস্য দেশগুলোর আর্থিক অনুদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আগারগাঁওস্থ কার্যালয়ে বিশ্ব প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজগুলো চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পিপিডি’র পার্টনার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. আশরাফি আহমেদ কর্মরত রয়েছেন।
টিএইচ