রাজধানী আদাবরের সন্ত্রাসী গ্রুপ `বিডিএসকে` গ্যাং এর প্রধান হৃদয়সহ (হিটার) ০৮ সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় ব্রিফেং মিডিয়া শাখার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক, কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব জানান।
ব্রিফিং থেকে জানা যায়, গত ০৭ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ০৮ টায় রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজন ভিকটিমকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঐ ভিকটিম`কে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
একইভাবে কিছুদিন পূর্বে একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর নিকট থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অংকের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে উল্লেখিত সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে।
যেখানে দেখা যায় যে, ০৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিল। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে যে, `বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)` গ্রুপের প্রধান হৃদয় হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে র্যাব এই গ্রুপের সদস্যসহ ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারের লক্ষে অভিযান পরিচালনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রাতে ফরিদপুর, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ ঘাট, মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে "বিডিএসকে” গ্রুপের লিডার শ্রীনাথ মন্ডল হৃদয় হিটার হৃদয় (২২), মো. রবিন ইসলাম এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল @ কালো রাসেল (২৫), মো. আলামিন ডিশ আলামিন (২১), মো. লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান (২১), মো. আশিক হিরো আশিক (১৯), মো. জোবায়ের ইসলাম চিকনা জোবায়ের (১৯), এবং মো. সুমন বাইট্টা সুমনকে (২০), গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দেয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরে তাদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ০১টি বিদেশি পিস্তল, ০২টি চাপাতি, ০১টি রামদা, ০১টি চাইনিজ কুড়াল, ০৪টি চাকু (বড় ও ছোট), ০২টি হাসুয়া, ০১টি কাঁচি এবং ০১টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা `বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)` গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ২০/২৫ জন সদস্য রয়েছে। উক্ত দলের গ্যাং লিডার হৃদয় (হিটার হৃদয়) এর নেতৃত্বে বিগত ২/৩ বছর পূর্বে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এই গ্রুপের সদস্যরা পূর্বে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপ এর অন্তর্ভূক্ত ছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি- ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
তারা বর্ণিত এলাকাসমূহে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ বর্ণিত এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। এই গ্যাং এর সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সাথেও জড়িত।
এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা বর্ণিত ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত হৃদয় হিটার হৃদয় বিগত ২-৩ বছর যাবৎ "বিডিএসকে (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)` গ্যাং এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সে স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে গ্রুপটি পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত।
তার গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে সে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বর্ণিত মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করে।
গ্রেপ্তারকৃত রবিন ইসলাম (এসএমসি) রবিন স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাং এর বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রমে সে হৃদয়ের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করত। গ্যাং এর সদস্য হিসেবে অপরাধ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আদাবর এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কাজ করত। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মামলায় সে কয়েকবার কারাভোগ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত রাসেল (কালো রাসেল) `বিডিএসকে` গ্যাং এর সদস্য হিসেবে কাজ করত। গ্যাং এর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার পাশাপাশি সে লেগুনার চালক হিসেবেও কাজ করত। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ০৬ এর অধিক মামলা রয়েছে এবং ইতোপূর্বে সে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত আলামিন (ডিশ আলামিন) ও লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান `বিডিএস` গ্যাং এর সদস্য হিসেবে কাজ করত। তারা আদাবর এলাকায় অটো চালনার পাশাপাশি গ্যাং এর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। তাদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত জোবায়ের ইসলাম (চিকনা) জোবায়ের স্থানীয় একটি স্কুল হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। গ্রেপ্তারকৃত আশিক (হিরো আশিক) ও গ্রেপ্তারকৃত সুমন (বাইট্টা সুমন) `বিডিএসকে` গ্যাং এর সদস্য হিসেবে কাজ করত। গ্রেপ্তারকৃত আশিক মোহাম্মদপুর এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত জোবায়ের এর সাথে রাজমিস্ত্রীর হেলপার হিসেবে কাজ করতো। গ্রেপ্তারকৃত সুমন মোহাম্মদপুর ও বেড়িবাধসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালনা করত।
তারা বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
টিএইচ