বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, শীতের সময় গ্যাসের সংকট এমনিতেও থাকে। দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রাহক এলপিজি ব্যবহার করেন। বাসা-বাড়িতে চুলায় গ্যাসের সংযোগ খুব অল্প।
চুলায় গ্যাস ব্যবহার করে ঢাকা এবং এর আশেপাশের কিছু অংশ, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশের মানুষ। বিস্তীর্ণ এলাকায় আমরা প্রায় সাড়ে সাত লাখ গ্যাসের অবৈধ লাইন উচ্ছেদ করেছি। তারপরেও আবার নতুন করে অবৈধ লাইন চালু হচ্ছে। এর ফলেই একটা বিরাট এলাকায় গ্যাস প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে গ্যাসের যে সংকট রয়েছে, আমরা আশা করছি আগামী দু’একদিনের মধ্যেই তা কমে অনেক ভালো অবস্থায় আসবে। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর।
মহেশখালীর এলএনজি এফএসআরইউয়ের কারিগরি ত্রুটির কারণে সরবরাহ না থাকায় শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট শুরু হয়। তবে ওইদিন রাত থেকে পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রাহকরা গ্যাস পেতে থাকেন। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকে। তবে দুপুর ১২টার পর গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবার ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
আমাদের সব গ্রাহকদের মিটারের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এরইমধ্যে সাড়ে চার লাখ গ্যাস মিটার লাগানো হয়ে গেছে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী তিন বছরের মাথায় সব জায়গায় গ্যাসের মিটার চালু করা। আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম গ্যাস মিটার স্থাপন করতে।
কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের জন্য সেটি করতে দেরি হয়েছে। সে সমস্যার এখন সমাধান হয়েছে। আমাদেরকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান ফাইন্যান্স করছে। এরইমধ্যে জালালাবাদে ৫০ হাজার মিটার, কর্ণফুলীতে আড়াই লাখ মিটার এবং ঢাকায় সাড়ে ৪ লাখ মিটার লাগানোর কাজ চলছে। আমরা চাইছি এলপিজির পরিধিটা আরও বাড়াতে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলপিজি এখন বাসা-বাড়ি এবং গাড়িতেও ব্যবহার হচ্ছে। অনেকেই এর দাম কম-বেশি নিয়ে কথা বলেন। আমরা একটি মানদণ্ড ধরে দাম নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। বিশ্ববাজারে এলপিজির দামের ওপর ভিত্তি করে দেশীয় বাজারে দাম নির্ধারণ হয়। এখন বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কম বলেই বাজারে কিছুটা কম দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। আমি সবাইকে আবারও অনুরোধ করব, আপনারা ধৈর্য ধরুন। আমরা শিগগিরই বাসা বাড়িতে মিটার লাগিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগের চেষ্টা করছি।
কতদিনে এ সংকট সমাধান হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এ সংকটের সমাধান হবে। এটা আমাদের অনেক আগের একটা পরিকল্পনা। আমাদের প্রায় ২০ লাখ মিটার বসাতে হবে। প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর আগে জাইকা আমাদের এ প্রকল্পে ফান্ড দিয়েছিল। এখন নতুন করে অর্থের সম্ভাবনা পাওয়ায় আমরা আবার কাজ শুরু করেছি।
শীতকালেও লোডশেডিং কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে গ্যাসের ডিমান্ড প্রায় ৩৮০০ এমএমসিএফডি। আমরা এখন সরবরাহ করতে পারি প্রায় ৩২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস। এখানে আমাদের শিল্পকারখানা ও বিদ্যুৎ-এর ক্ষেত্রে একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন আমাদের গ্যাস না থাকায় পাওয়ার প্লান্ট কিছুটা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর কারণেই আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আশা করছি আজ-কালের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
টিএইচ