কাঁটাতারের বেড়া কিংবা ভৌগলিক সীমারেখা বেঁধে দিলেও এপার বাংলা-ওপার বাংলার মানুষের হৃদয়ের বন্ধন কেউ আলাদা করতে পারবে না, বলেছেন কলকাতা সফররত তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী আটশ` বছরের পুরনো শহর কলকাতার রবীন্দ্র সদনে চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ মৈত্রীর কথা বলেন।
বাঙালিরা অনেক মেধাবী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতবর্ষ থেকে যারা নেবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই বাঙ্গালি। মেধায় বাঙ্গালিরা বিশ্বের অনেককে পেছনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বের উন্নত সংস্কৃতিগুলোর অন্যতম।
১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি যেন কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ হয়ে না যায়। শিল্পীদের ভৌগোলিক সীমারেখা নেই। উত্তম-সুচিত্রা শুধু ভারতের নয়, আমারা মনে করি তারা বাংলার, তারা আমাদেরও।
বিশেষ অতিথি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী বাবুল সরকার বলেন, দুই দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমাদের যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। এপার বাংলা-ওপার বাংলার শিল্পীদের মধ্যে আসলে কোন দূরত্ব নেই।
সভাপতির বক্তৃতায় ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক এখনো কমেনি। দর্শকদের উৎসাহিত করতে দুই দেশের চলচ্চিত্রকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শেষে দু`দেশের শিল্পীরা যৌথভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। কলকাতার নন্দন ১,২ ও ৩ প্রেক্ষাগৃহে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৫টি চলচ্চিত্রের উন্মুক্ত প্রদর্শনী চলছে।
উৎসবে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে গুণিন, হৃদিতা, বিউটি সার্কাস, হাওয়া, পরাণ, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পূণ্য, কালবেলা, চন্দ্রাবতী কথা, চিরঞ্জীব মুজিব, রেহানা মরিয়ম নূর, নোনাজলের কাব্য, রাত জাগা ফুল, লাল মোরগের ঝুঁটি, গোর, গলুই, গন্ডি, বিশ্ব সুন্দরী, রূপসা নদীর বাঁকে, শাটল ট্রেন, মনের মত মানুষ পাইলাম না, ন-ডরাই, কমলা রকেট, গহীন বালুচর, ঊনপঞ্চাশ বাতাস।
প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’, বধ্যভূমিতে একদিন, একটি দেশের জন্য গান, মধুমতি পারের মানুষটি শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে খড়, ময়না, ট্রানজিট, কোথায় পাবো তারে, ফেরা, নারী জীবন, কাগজ খেলা এবং আড়ং।
কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন’ : এ দিন দুপুরে কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুরের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত `বাংলাদেশের উন্নয়ন` আলোচনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন সফররত মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা বিশ্বের সকল উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণ। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে যখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম তিনটি দেশের একটি।
শেখ হাসিনার সরকার আঞ্চলিক উন্নয়নে বিশ্বাস করে কারণ, আঞ্চলিক উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন হয় না উল্লেখ করে হাছান বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা এবং উন্নয়ন যাত্রায় ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে বাংলাদেশ।
‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’: এর আগে, সকালে স্থানীয় একটি হোটেলে ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’ অনুষ্ঠানটি দুই বাংলার মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ সম্মানিত অতিথি এবং কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং জয়া আহাসান, চঞ্চল চৌধুরী, মোশারফ করিমসহ দুই বাংলার শিল্পী ও গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত মতবিনিময় করেন।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজাম, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, বাংলাদেশ হাই কমিশন, নয়াদিল্লীর প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ছিলেন।
টিএইচ