দেশের ৫৭টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় প্রার্থী ও ভোটার কম থাকলেও উত্তপ্ত অবস্থা রয়েছে মাঠে। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা মাত্র ৬০ হাজার ২১২ জন আর প্রার্থী দুই হাজার।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এর আগে শনিবার রাতে শেষ হয়েছে এ নির্বাচনের প্রচারণাও। গাইবান্ধার উপনির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি মনিটরিং করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোটারদের সবাই স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি। সব ভোটকেন্দ্র উপজেলা সদরে। তবু ভোটের আগের দিন রোববার (১৬ অক্টোবর) বিভিন্ন এলাকা থেকে হামলা-ভাঙচুর, ভোটার আটকে রাখা, নির্বাচন প্রভাবিত করতে পেশি শক্তি, কালো টাকা ছড়ানো এবং ক্ষমতার দাপটের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব অনিয়মে জড়িয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও। সিরাজগঞ্জ ও গাজীপুরে ভোটার কেনার দর লাখ টাকা উঠেছে। পঞ্চগড়ে দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, হামলা হয়েছে নড়াইলেও।
বরিশালে ৩১ ভোটারকে আটকে রাখার অভিযোগ তদন্তে গত রাতে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনেকটাই একতরফা এই নির্বাচনেও বিভিন্ন জেলা থেকে সীমাহীন অনিয়মের খবর মিলছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে সব জেলায় প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচন বর্জন করেছে।
ইসির পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তবে ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে রোববার (১৬ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে ডিসি-এসপিদের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রচুর অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তাই সিসিটিভি আর ইভিএমেই ভরসা রাখতে হচ্ছে ইসিকে।
সদ্য বাতিল হওয়া বহুল আলোচিত গাইবান্ধা উপনির্বাচনের মতোই এই নির্বাচনেও সব কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো হয়েছে। ৫৭ জেলার ৪৬২ উপজেলা সদরে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া তদারকির জন্য ঢাকায় ইসি কার্যালয়ে পর্যবেক্ষণ কক্ষ বসানো হয়েছে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল রোববার দুপুরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি সন্ধ্যায় ইসির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সিসিটিভি ও ইভিএম পরিচালনার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানা হয়েছে, সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। এবারের নির্বাচনে ৬১ জেলার তপশিল ঘোষণা করা হলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞায় নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোট স্থগিত রাখা হয়।
অন্যদিকে ভোলা ও ফেনী জেলার চেয়ারম্যান পদসহ সবগুলো পদে একক প্রার্থী হওয়ায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। বাকি ৫৭ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, মোট ৪৪৮ জন সাধারণ সদস্য ও ১৬৬ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন।
এর মধ্যেও ২৬ জেলার চেয়ারম্যান একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য ও ৬৫ জন সাধারণ সদস্য ভোট ছাড়াই জয় নিশ্চিত করেছেন।
বাকি পদগুলোতে ৯২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৬০৩ জন সংরক্ষিত সদস্য এবং ১ হাজার ৪৮৫ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
আইন অনুযায়ী, সংশ্নিষ্ট জেলার সবগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র ও কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত করেন।
এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
আর প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠায় তাঁকে বদল করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে ভোট কক্ষে ভোটাররা যাতে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে না পারেন কিংবা কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ব্যালট ইউনিটের ছবি তুলতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
টিএইচ