শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Post

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন আজ, আলোচনায় যেসব ইস্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন আজ, আলোচনায় যেসব ইস্যু

ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছায়।

বাহিনী দুটির মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের এ সীমান্ত বৈঠক হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার আমলে দুই দেশের মধ্যে এটাই প্রথম সীমান্ত সম্মেলন। এবারের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকটি ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বা সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া এবার নিয়মিত আলোচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ, সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন, কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ এবং আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়সহ অন্তত ৭টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

রোববার বিজিবি সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ৪ দিনব্যাপী এই সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করবেন। অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করবেন।

এর আগে এ সম্মেলনকে সামনে রেখে হওয়া প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের কথার ‘টোন’ আলাদা হবে।

বিজিবি জানায়, এবারের সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বা সীমান্ত হত্যা, আহত করা, আটক বা অপহরণ রোধ, ভারত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়াসহ অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ ও চলমান অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের নিষ্পত্তি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা হবে।

এ ছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন, জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের বিষয়েও আলোচনা এজেন্ডায় রয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়েও আলোচনা হবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই আস্থার ঘাটতির কারণে সীমান্তে উত্তেজনার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে, কিন্তু এখন এই আলোচনার মাধ্যমে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশে ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিষয় উত্থাপন করতে চলেছে ভারত । পাশাপাশি সম্প্রতি সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনার ইস্যুটিও উত্থাপন করবে বিএসএফ।

টিএইচ