জাতীয় সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। পরিস্থিতি ঘোলা হলে সরকারকেই দায় নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদের নামে দেওয়া মামলা তুলে নিতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। বলা হয়, দাবি আদায় না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর গণআন্দোলন হবে।
সরকারি সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মনোজ প্রভাকর রায় শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের একদফা দাবিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে সবশেষ গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে পুলিশের বাধা ও হামলার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাহবাগসহ সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দেশের কোথাও কোথাও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা এবং কুমিল্লায় ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে দশের অধিক শিক্ষার্থী আহতও হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবে না। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবারও `ব্লকেড` কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এরমধ্যে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই সঙ্গে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি। কিন্তু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই এদিন সড়কে নামে শিক্ষার্থীরা।
টিএইচ