যুবসমাজের জন্য সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তারা জানান, এতে দেশের প্রতিরক্ষায় যুবসমাজ অংশ নিতে পারবে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সংক্রান্ত অধিবেশনে তারা এ প্রস্তাব দেন।
অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সিভিল মিলিটারি কোঅপারেশন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা প্রশ্ন করেছিলেন। সিভিল প্রশাসনের অফিসাররা ডিভিশন পর্যায়ে যে ওরিয়েন্টেশন করেন, এই ওরিয়েন্টেশনগুলা করা সম্ভব কি না? যাতে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর বোঝাপড়া আরও বাড়ানাে যায়। একটা প্রশ্ন ছিল আমাদের যুবসমাজের জন্য একটি ইউনিভার্সেল মিলিটারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে। যেখানে যুবসমাজের যারা আছেন তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন এবং দেশের প্রতিরক্ষায় তারা অংশ নিতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, তারা নিজ নিজ জেলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে চান। রিমোট জায়গায় বা চরাঞ্চলে যেখানে হয়তো বেশি পরিমাণ ফোর্স দরকার বা লজিস্টিক নিয়ে যেতে হবে, এই ধরনের এলাকায় তারা অভিযান পরিচালনা করতে চান। সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল। বাংলাদেশ নেভির কাছে প্রশ্ন ছিল, জাটকাবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে বা আমাদের নদীতে যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ রক্ষায় তারা আরও ওতপ্রোতভাবে কীভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারেন সে বিষয়ে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিন ন্যাশনাল ফন্ট যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তার কারণে কয়েকটি জেলায় পর্যটন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে। এ পর্যটন শিল্প ব্যাহত হওয়ার কারণে সেখানকার ইয়াং জেনারেশন কাজ হারাচ্ছে, চাকরি হারাচ্ছে এবং তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে পারি সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।
যেসব জেলায় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে প্রশ্ন ছিল বলে জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।
তিনি বলেন, আমি আমার সমাপনী বক্তব্যে বলেছি জেলা প্রশাসক হিসেবে আগামী দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যেমন আমি বলেছি প্রায় ১৪০০ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, যেগুলো ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লুট হয়েছিল। আড়াই লাখ গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। সেগুলো তাদের জেলাতে কোনো না কোনো জায়গায় আছে। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে পড়তে পারে এবং তারা ব্যবহার করতে পারে। আমি উল্লেখ করেছি স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হচ্ছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
রমজান মাসে সরকারকে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য তাদের (ডিসি) নিজ জেলায় যেন কম রাখতে পারেন সে জন্য চেষ্টা করতে হবে। বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, সেটা যাতে মোকাবিলা করা যায়, কৃষকরা যাতে সেচের উপকরণ এবং কৃষি উপকরণ সময়মতো পান সেসব বিষয় নিয়ে বলেছি। আমি বলেছি, সাধারণ মানুষের তিনটি প্রত্যাশা এবং এই প্রত্যাশাগুলা আকাশচুম্বী নয়। প্রথম বলেছি, জীবন ও জীবিকার জন্য তারা নিরাপদে চলাফেরা করতে চান এবং রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চান। দ্বিতীয়তে বলেছি, দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যেন থাকে। এটার বাস্তবায়ন তারা দেখতে চান। আর তিন নম্বরটা বলেছি যে, সার্ভিস বা সেবা সরকারের কাছে তাদের পাওয়ার কথা। সেটা যেন কোনো সমস্যা ছাড়া, কষ্ট ছাড়া, কোনো ঝামেলা ছাড়া তারা পেতে পারেন। আমি বলেছি ,মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক যারা আছেন মানুষের জন্য তারাই সরকার। কাজেই যে সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান করার কথা সেগুলো তাদেরকেই করতে হবে।
যুব সমাজের সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমাদের যে চিফ অফ জেনারেল স্টাফ উনি বলেছেন- আমাদের আনসার ভিডিপির মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় প্রত্যেক ইউনিয়নে একটা করে কোম্পানি অলরেডি ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
এটাকে আরও ব্যাপক আকারে করা যায় কি না সে বিষয়ে একজন ডিসি অনুরোধ করেছিলেন। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা চিন্তা করতেই পারি এবং আমরা জানিয়েছি এটা যদি সরকার নির্দেশনা দেয়, তাহলে জনগণের সিদ্ধান্তই সরকারের সিদ্ধান্ত।
এখন অপারেশন ডেভিল হান্ট ছাড়া আরও কোনো অপারেশন চালানোর নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছিল। তার মানে, যে অস্ত্র লুট হয়েছিল তার তিন-চতুর্থাংশের বেশি উদ্ধার হয়েছে। আমি মনে করি, এটি বিরাট সাফল্য। ৬ লাখ গুলির মধ্যে আড়াই লাখ এখনো উদ্ধার হয়নি। তার মানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চলমান যে অভিযান আছে তার মাধ্যমে উদ্ধার করা সম্ভবপর হবে।
কুকি চিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি কুকি চিনের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান, সেটা চলছে। এ পর্যন্ত কুকি চিনের বিরুদ্ধে অভিযান করতে গিয়ে আমাদের সাত সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এ অভিযান চলবে তারা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, নরসিংদীর ছয়টি ইউনিয়ন ও চরাঞ্চল দুর্গম। সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেসব জায়গায় স্পেশাল অপারেশন দরকার।
এসময় কোস্টগার্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কিছুদিন ধরে ইলিশের সরবরাহ বাজারে বেড়ে গেছে। মানুষ ইলিশ খেতে পারছে বা রপ্তানি হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে কোস্টগার্ডের অপারেশনের কারণে।
টিএইচ