রাজধানীর হাজারীবাগ একটি বাসা থেকে মা ও শিশু সন্তানসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাজারীবাগ শেরে-বাংলা-নগর রোডের গদিঘর এলাকা থেকে মা ও দুই শিশু সন্তানসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- হাসিনা বেগম (২৭), সাদিয়া (৩) ও ৭ মাস বয়সী শিশু সন্তান সিয়াম। তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি বলেন, দুই ছেলে-মেয়েকে হত্যার পর মা নিজে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে সাদ্দাম হোসেন তার তিন বছরের মেয়ে সাদিয়াকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদ্দাম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারের গাড়িচালক।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সাদ্দাম রায়েরবাজারের ২২৭ বদিঘরে থাকেন। ঘটনার সময় তিনি পেশাগত কাজে এবং তার ১০ বছরের ছেলে কোচিংয়ের জন্য বাইরে ছিলেন।
তিনি দাবি করেন, স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা ছিল না। কারা তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে এই প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেন সন্তানদের মৃত্যুর বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাতে চাননি।
নিহত হাসিনার বড় ভাই মনির হোসেন বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে আমার বোনের স্বামী তাকে মারধর শুরু করে। প্রতিনিয়ত তাকে মারধর করতো। বিয়ে হয়েছে দীর্ঘ ৮ বছর। আজ আমরা এসে দেখি সন্তানসহ আমার বোনের মরদেহ পড়ে আছে।
মনির বলেন, যদি আমার বোন গলায় ফাঁস দিয়ে থাকে তাহলে তার স্বামীর নির্যাতনের কারণে সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। এটা আত্মহত্যা না, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে বাড়ির মালিক রমজান আলী বলেন, তারা আমার বাসায় উঠেছে মাত্র দু-মাস হলো। এর মধ্যে তাদের কোনো ঝগড়া বিবাদ আমার চোখে পড়েনি। আজকে সন্ধ্যায় তার বড় ছেলে সালমান কোচিং থেকে বাসায় ফিরে বাসার দরজা নক করছিল। অনেকক্ষণ ধরে বাসার দরজা নক করার পরও যখন দরজা খুলছিল না। তখন পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশি রানা ছাঁদে গিয়ে দেখে ছেলেটির মা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।
পরে আশপাশের সবাইকে খবর দিলে সবাই এসে তার ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে ভিতরে দুই শিশুর লাশ পড়ে আছে। এ সময় তার স্বামীকে ফোন দিলে সে দ্রুত বাসায় ছুটে আসে। এসেই তার তিন বছর বয়সী মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানার ওসি একে সাইদুল হক ভূইয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আমরা মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
টিএইচ