বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের কবর সংসদ ভবন এলাকা থেকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দেয়ার দায়ে এ দাবি করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘মায়ের কান্না’। সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়ার কবর না সরালে নিজেরাই অপসারণের হুঁশিয়ারি দেন।
কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীরবিক্রম, মাহাবুব উদ্দীন আহমদ বীরবিক্রম, ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ এজাহার খান এমপি এবং ১৯৭৭ সালে ‘গণফাঁসির’ শিকার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সন্তানরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সংসদের পাশের এই ‘পবিত্র’ জায়গা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণ করতে হবে। জিয়াউর রহমান ইতিহাসের পাতায় একজন ‘খুনি ও বিশ্বাসঘাতক’। বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছিল জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশে দুর্নীতি ও লুটপাটের অর্থনীতি চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিলেন তিনি।
বক্তারা বলেন, নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যা করেছে। জিয়াউর রহমান খালি করেছে বহু মায়ের বুক, স্ত্রী হারিয়েছে তার স্বামীকে এবং সন্তান হারিয়েছে তার পিতাকে। আর তাই জিয়াউর রহমান ইতিহাসের পাতায় একজন খুনি ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
সংসদ এলাকার পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে রয়েছে জিয়াউর রহমানের কবর। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হওয়ার পর প্রথমে তাকে চট্টগ্রামে সমাহিত করা হয়েছিল, পরে সেখান থেকে কবর তুলে আনা হয় ঢাকায়।
গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদের একাধিক বৈঠকে জাতীয় সংসদ চত্বর থেকে জিয়াউর রহমানের কবরসহ লুই আই কানের নকশা বহির্ভূত স্থাপনা সরানোর বিষয়ে কথা ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয় উদ্যোগী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুই কানের মূল নকশা সংগ্রহ করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে জিয়ার কবর সরানোর দাবি করলেও এখনও সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
তারা বলেন, বিদ্রোহ দমনের নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সামরিক বাহিনীর প্রায় দেড় হাজার সদস্যকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিসহ নানা দণ্ড দেয়া হয়েছিল। ইতিহাসে এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ড চালান বলে দাবি করেন সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনরা।
স্বজনরা বলেন, কাউকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কাউকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে জিয়াউর রহমান দণ্ড কার্যকর শুরু করেন। বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদেরই ফাঁসি কার্যকর করেন সবার আগে। এতদিন পরও স্বজনের কবরের সন্ধান না পাওয়ায় ক্ষোভ জানান দণ্ড কার্যকর হওয়াদের স্ত্রী, সন্তানরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তারা স্বামী, বাবা হত্যার বিচারের পাশাপাশি এমন হত্যাকাণ্ডের অপরাধে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
কিন্তু ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের স্বজনরা বলেন, ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরবর্তীতে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমান একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করতেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। কোন প্রকার ধর্মীয় সৎকার ছাড়াই লাশগুলো ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে, কুমিল্লার টিক্কারচর কবরস্থানে মাটিচাপা দেয়া হয়।
সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালের কথিত বিচারে ফাঁসি হওয়া ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৪৩ জন, তেমনি কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর আড়াই হাজার সদস্য।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবী নিয়োগের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। অথচ এই মানুষগুলোকে ন্যায়বিচারের অধিকার ছিলো। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘদিন পরিবারগুলোর কাছে এই তথ্য অজানা ছিলো। আমরা জানি না কোথায় তাদের কবর।
ইএফ