শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের টাকা আত্মসাতকারী পরিচালকদের শাস্তি দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের টাকা আত্মসাতকারী পরিচালকদের শাস্তি দাবি

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা মিলে প্রায় ১০৪ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত কার্যবিবরণীতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জমি কেনার নামে কোম্পানি থেকে ১৩ কোটি হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গ্রাহক।

জানা গেছে, হোমল্যান্ড লাইফের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৩১তম বোর্ড সভায় আত্মসাৎ করা ১০৪ কোটি টাকা উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যা এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিতেও পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত অভিযোগে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স বীমা খাতে ব্যবসা শুরু করে ১৯৯৬ সালে। কোম্পানীর অধিকাংশ পরিচালক সিলেটের। সবাই লন্ডন প্রবাসী। কোম্পানী শুরুর পর থেকে সিলেটের পরিচালকগণই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কোম্পানী প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকেই তাঁরা পরিকল্পিত ভাবে পর্ষদ সভা করা শুরু করেন সিলেটে। উদ্দেশ্য ছিল, ঢাকার যে সকল পরিচালক আছেন, তাঁরা যেন পর্ষদ সভায় অংশ গ্রহণ করতে না পারে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা। যেন অন্য কোনো পরিচালক জানতে বা বুঝতে না পারেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানী থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা ঐ সিলেটের পরিচালকগণ হাতিয়ে নেয়।

সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল হক কোম্পানী থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে পরবর্তীতে টাকা ফেরৎ দেয়ার শর্তে নেগোসিয়েশন করে মামলা তুলে নিলেও ঐ টাকা আর তিনি ফেরৎ দেননি। প্রধান কার্যালয় থেকে সার্ভিসিং কার্যালয়ে তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যমে ৬২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এই ফয়জুল হক সহ আরও কয়েকজন পরিচালক।

কাজী এনাম উদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার ছেলে কাজী আরাফাত রহমান কোম্পানীর কাছে জমি বিক্রয়ের অগ্রীম বাবদ ২,৭৫,০০,০০০/- টাকা নিয়ে কোম্পানীর অনুকূলে জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় কোম্পানী তাঁর নামে মামলা করে। উক্ত মামলায় তার জেল হয় এবং ৬ মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি নিয়ে লন্ডন পালিয়ে যান। এখনও পর্যন্ত তিনি পালাতক আছেন। টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

২০০৯ সাল পর্যন্ত সিলেট গ্রুপের ঐ পরিচালকগণ বিভিন্ন খাতে ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পর কোম্পানীর আর্থিক ভিত অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঐ সময়ে কোম্পানীর ঘাটতি হয় ১০ (দশ) কোটি টাকা। কোম্পানী লোকসানে পড়ার কারণে ঐ সময়ে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ কোনো প্রকার পলিসি বোনাস ঘোষণা করতে পারেননি। গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানীকে সমস্যায় রেখে দায় পরিশোধের ব্যর্থতা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আমাদের কাছে হস্তান্তর করে এবং মেজর (অবঃ) মোঃ জাহাঙ্গীর চেয়াম্যান (২০১০-২০১২) হিসাবে দায়িত্ব ভার নেন। এর পর সালেহ হোসেন চেয়াম্যান নির্বাচিত (২০১২-২০১৪) হন। ২০১৫ সালে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে মোহাম্মদ জুলহাস কঠোর পরিশ্রম করে কোম্পানীকে লাভ জনক পর্যায়ে এনেছেন। ২০১২ সালে এসে ১০ (দশ) কোটি টাকা ঘাটতি পূরন করে ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে গ্রাহকগণকে নিয়মিত ভাবে পলিসি বোনাস দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত একচ্যুয়ারীয়াল আনুয়েশন হয়েছে।

সিলেট গ্রুপের পরিচালকগণ বিভিন্ন খাতে যে ১০৪ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে মোহাম্মদ জুলহাসসহ অন্যান্য কয়েকজন পরিচালক মিলে তা উদ্ধারের জন্য কার্যক্রম শুরু করেন। এবং তাদের নামে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয় এবং কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীনও আছে। বিগত ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত কোম্পানীর ১৩১ তম বোর্ড সভায় আত্মসাৎকৃত ১০৪ কোটি টাকা উদ্ধারের সিদ্ধান্ত পরিচালকসহ অন্যান্য সকল পরিচালকগণও উপস্থিত ছিলেন। ঐ বোর্ড সভা ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০৪ কোটি টাকা হাতিনো দেয়ার সাথে জড়িত পরিচালকগণের নাম ও ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। অর্থ আত্মাসাতের সাথে বর্তমান সিলেটের পরিচালক গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাঁরা গ্রাহকের এই অর্থ ফেরত দেয়া/আদায় করার প্রতিনয়াকে বাঁধা গ্রস্ত করতে চায়।

সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী ৭ জন পরিচালকের নামে মাগুরা জেলার শালিখা থানায় বীমা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ভারটি মামলায় তাঁরা মাতিঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং জেল হাজতে থাকেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁরা অফিসে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত আছেন।

তাঁরা দাবী করেন যে, লন্ডন থেকে অর্থ উপার্জন করে এনে এদেশে বিনিয়োগ করেছেন। মূলতঃ এ তথ্য সম্পূর্নরূপে মিথ্যা। সম্প্রতি ২০১৯ ও ২০২০ সালে তারা ৭ জন পরিচালক মিলে সর্বসাকুল্যে ৫,৬৬,৪৫,১০০/- টাকা কোম্পনীতে নুতনভাবে বিনিয়োগ করেছেন বলে দাবী করছেন। কিন্তু উক্ত অর্থ কোনো বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের দেশে আনেন নি। সবই বাংলাদেশী সিডিউল ব্যাংকের পে-অর্ডার ও চেকের মাধ্যমে কোম্পানীর হিসাবে জমা করেছেন (প্রমান সংযুক্ত)।

আত্মসাতকৃত গ্রাহকের উক্ত ১০৪ কোটি টাকা যাতে কোম্পানীর খাতে ফেরৎ দেয়া না লাগে তার জন্য জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তাঁরা কোম্পানীতে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সাড়ায় নিয়োগকৃত পরিচালনা পর্ষদ কে বাদ দিয়ে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই বে-আইনি ভাবে বিগত ২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বোর্ড মিটিং করে অর্থ আত্মসাৎকারীর মাষ্টার মাইন্ড মোঃ ফয়জুল হক কে সংযুক্ত করে নিম্নে পুনরায় বোর্ড গঠনের দাবী করে জোর পূর্বক কোম্পানীর ক্ষমতা দখল করার পায়তারা করছেন।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্সের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, বেহাত হয়ে যাওয়া কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা উদ্ধারে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে লন্ডন প্রবাসী পরিচালকদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুলহাসকে পদত্যাগ করার জন্য তারা চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।