ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিন ধরে করছাড় দেওয়ার সমালোচনা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছর ধরে আমরা করছাড় দিয়ে শিশু লালনপালন করছি; আর কতকাল লালন করব? আমি উদাহরণ দিলাম। আপনারা অনেকেই বুঝতে পারবেন।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। আগারগাঁও এনবিআর ভবনে এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে শিশুদের এত দিন ধরে লালনপালন করা হয়েছে, তারা এখন শারীরিকভাবে বড় হয়ে গেছে। তারা এখনো বলে, ‘আমাদের সুরক্ষা দিন’; কিন্তু সুরক্ষার দিন তো চলে গেছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরিয়ে আসবে, যাকে বলে এলডিসি উত্তরণ হবে। তাই করছাড়ের এসব সুবিধা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা কর কর্মকর্তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জোর করে কর আদায় করবেন, তা নয়।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, যেখানে কর প্রতিপালন হবে না, সেখানে কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, করদাতাদের যেন কর কার্যালয়ে আসতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়লে এত সম্পদের জোগান কোত্থেকে আসবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান, এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরী, আবদুর রউফ প্রমুখ।
পৃথিবীতে যেসব দেশের কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে এখন কর-জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশের নিচে। এই কর জিডিপির অনুপাত কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বছরের পর বছর ধরে দিয়ে যাওয়া করছাড় বা অব্যাহতি।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট অবকাশ বন্ধ করা ও সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করাসহ নিয়মনীতি পরিপালন করা গেলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা যেত। কিন্তু ওই বছর আদায় হয়েছিল ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, সম্ভাবনা ও আদায়ের মধ্যে ঘাটতি ছিল প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।
তবে সম্প্রতি কয়েক বছরে ভ্যাট–ছাড়ের পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে এনবিআর।
টিএইচ