দীর্ঘবছর পার হলেও অরক্ষিত বেড়িবাঁধ গুলি পাউবো সংস্কার বা বিকল্প বাঁধ নির্মাণ না করায় সমুদ্র উপকূলীয় খুলনার দাকোপের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আতংঙ্ক কাটছে না। প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলা, মহসিন ও ফোনির ক্ষত মুছতে না মুছতেই গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এর আগমনে এ উপজেলার উপকূলবাসীদের তারা করে ফিরেছে।
প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ আসলেই তা মোকাবেলায় এ উপকূলবাসীদের সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। জনসংখ্যার তুলনায় দুর্যোগ সহনশীল সাইক্লোন শেল্টার পর্যাপ্ত না থাকায় হাজারো পরিবারকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
ঘূর্ণিঝড় মোচার আগমনে অনেকে তাদের বসতঘর বাড়ি স্থাপনা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে নিজ নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে উপকূলবাসীদের মধ্যে এখন সর্বত্র আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ষাট দশকের সময় নির্মিত ওয়াপদা বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার না হওয়ায় প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে বাঁধগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এ কারণে ২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ফোনি ও মহসিনের তাণ্ডবে সমুদ্র উপকূল খুলনার দাকোপের বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়।
লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে এ উপজেলার উপকূলীয় এলাকা। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবে সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ শিবসা, ঢাকি ও ভদ্রা নদীতে বিলীন হয়। তখন আইলার জলোচ্ছাসে এ দুইটি ইউনিয়নের ১৫ থেকে ১৬ হাজার পরিবারের ৩৫ হাজার মানুষ সম্পূর্ণ পানিবন্দি হয়ে পড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর।
আইলার পরবর্তী আড়াই বছর পর এ দুই ইউনিয়নে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মিত হওয়ায় সে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সিডর ও আইলার তান্ডবে তখন এ উপজেলার ১০ থেকে ১৫ হাজার বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ২৬ হাজার কাঁচা পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। তখন বসতঘর বাড়ি স্থাপনা সহায় সম্বল হারিয়ে হাজারো পরিবারকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে।
বর্তমানে এ উপজেলার যে সকল স্থানে ভয়াবহ নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো হলো পাউবোর ৩১নং পোল্ডারের মেঝ খলিশা, পানখালী ফেরীঘাটের পূর্ব পাশে, পানখালী, মৌখালী, কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া বাজার, গড়খালী, ৩২নং পোল্ডারের কালিবাড়ি লঞ্চঘাটের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে, নলিয়ান বাজারের উত্তর পাশে, কালাবগি, জালিয়াখালী, ভিটেভাঙ্গা, বানিশান্তা বাজারের পূর্ব পাশে, চুনকুড়ি জি গ্যাস ফ্যাক্টারির সামনে, পোদ্দারগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে।
কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন কুমার মণ্ডল বলেন, নদী শাসন না করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় আজ এ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব স্থানের বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে আবারও মহাবিপর্যয় মানুষের মধ্যে নেমে আসতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, এ উপজেলাটি মূলত তিনটি পোল্ডারে বিভক্ত। আইলার জলোচ্ছাসে পাউবোর ৩২ এবং ৩৩নং পোল্ডারের বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বাঁধগুলো বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে।
নির্মিত বাঁধের যে সব স্থানে ফাটল ও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে সেখানে সংস্কার করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ঘুর্ণিঝড় মোকালেলায় দাকোপ উপজেলায় স্কুলকাম সাইক্লোন শেল্টার আছে ১১৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত ও ভাঙন কবলিত বাঁধ রক্ষায় বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় দাকোপ উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাড. গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার জানান, উপজেলার জনজীবন রক্ষার্থে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ সকল বেড়িবাঁধসহ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। আশাকরি উপকূলবাসীদের জান মাল রক্ষার্থে খুব শিগগিরই এ দুইটি উপজেলায় যুগোপযোগী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
টিএইচ