মজুরি বোর্ড ঘোষিত নূন্যতম মুজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রত্যাখান করে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে অন্তত শতাধিক পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কতৃপক্ষ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় বন্ধের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর ও নিশ্চিন্তপুর এবং জিরাবো-বিশমাইল সড়কের কাঠগড়া আমতলা ও বড় রাঙ্গামাটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ পোশাক কারখানার গেটে বন্ধের নোটিশ রয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার নোটিশে বলা হয়, এতদ্বারা অত্র কারখানার সকল শ্রমিক কর্মচারীগণের অবগতির জন্য জানানো অদ্য ০৯ নভেম্বর উল্লেখিত কারখানার সকল শ্রমিক যথা সময়ে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করেন। এর কিছুক্ষণ পর সকাল ১০টার দিকে কতিপয় শ্রমিক কিছু অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে এবং কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকগণ কারখানার অভ্যন্তরে চরম বিশৃঙ্খলা, দাঙ্গা হাঙ্গামাসহ অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ বার বার কাজে যোগদানের জন্য শ্রমিকদের কাছে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকে এবং এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার স্থান ত্যাগ করে। শ্রমিকদের এরূপ আচরণ অবৈধ ধর্মঘটের শামিল। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষ বাধা হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক ১১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষনা করলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে আবহিত করা হবে।
আগামী এ্যাপারেল্স লিমিটেড কারখানার নোটিশে বলা হয়, গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকরা কারখানায় এসে ফেইস পাঞ্চ করে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। পরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর কারখানা ত্যাগ করে বাহিরে চলে যায়। এতে করে নিরুপায় হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। তবে বেতনের আগ পর্যন্ত ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে যায়। বেতন হয়ে গেলে ৮ নভেম্বর আবারও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে শ্রমিকরা। সাধারণ শ্রমিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মিছিল করতে করতে কারখানা গেটে চলে যায়। এমতাবস্থায় আবারও কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি দিতে বাধ্য হয়। তাই কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ৯ নভেম্বর কারখানা বন্ধ রাখে। এমন কার্যকলাপ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বে-আইনি ধর্মঘটের শামিল। তাই কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণঅ করলো।
এছাড়াও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের দ্যাটস্ ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড, হা-মীম, শারমীন, দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, পাইওনিয়ার লিমিটেড এবং জিরাবো-বিশমাইল সড়কের এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেল লিমিটেড, ক্রোসওয়্যার লিমিটেড, সেইন এ্যাপারেলস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নীট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানার গেটেও প্রায় একই ধরণের বন্ধের নোটিশ দেখা যায়।
কারখানা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও জানিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগামী এ্যাপারেল্সেরে এক শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সংক্রান্ত একটি মেসেজ আমাদের মোবাইলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও কারখানার গেটে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে।
সকালে অনেকেই কারখানায় গিয়ে নোটিশ দেখে ফিরে এসেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ যে আইন দেখিয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে সেই আইনে কারখানা যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিনের বেতন পাবে না শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে প্রায় শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে আমাদেরকে কোন চিঠি দেয় নি। তবে বিভিন্নভাবে আমরা বন্ধের খবর পেয়েছি। অন্যান্য দিনের মত আজও আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
টিএইচ