তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে ঈশ্বরদীর লিচুর গুটি, মরে যাচ্ছে গাছ। এ অবস্থায় লিচুর আশানুরূপ উৎপাদন হবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। প্রায় ২০০ কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কা করছেন লিচু চাষিরা।
বৈশাখী খরতাপে পুড়ছে পদ্মা পাড়ের ঈশ্বরদী। রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেতে উঠেছে পথঘাট। তাপমাত্রার পারদ ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে। লিচু বাগান মালিকদের মধ্যে ফলন নিয়ে শুরু হয়েছে হাহাকার। বাড়তি পরিচর্যাতেও মিলছে না প্রতিকার। এ অবস্থায় ফলন কতটুকু পাবেন এ নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন বাগান মালিকরা।
ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এবারে ঈশ্বরদীতে বিপুল পরিমাণে লিচুর গুটি আশায় চাষিরা ৬০০ কোটি টাকা লিচুতে লেনদেন হবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ ভাগ গুটি ঝড়ে পড়ায় ২০০ কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কা করছেন লিচু চাষিরা।
এ অবস্থায় লিচুর গুটি ঝরে পড়া রোধে বাগানে সকাল ও বিকেলে নিয়মিত সেচ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। গাছে ফলন ধরে রাখতে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না প্রকৃতির বৈরীতা। দেশি লিচু হিসেবে পরিচিত মোজাফ্ফরপুরী জাতের লিচুর গুটি বেশি ঝড়ে পড়েছে। এরমধ্যে বোম্বাই জাতের গুটিও ব্যাপকভাবে ঝরা শুরু হয়েছে।
রসালো ও সুস্বাদু লিচু উৎপাদনে খ্যাত ঈশ্বরদীতে চৈত্র মাসে মুকুল থেকে লিচুর সবুজ গুটি বের হতে থাকে। এবারে প্রতিটি গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল থেকে গুটিও বেশ ভালো হয়েছিল। তাই চাষিরা ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু গত ২৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে আজবধি টানা তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। যারা মুকুল দেখে বাগান ক্রয় করে লাভবান হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল, তাপদাহের কারণে লাভবান হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে মূলধন ফেরত পাবে কিনা সেই আশঙ্কায় শংকিত।
সরেজমিনে উপজেলার লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত শেখের দাঁইড়, মিরকামারী, মানিকনগর, বক্তারপুর, জগন্নাথপুর, বাঁশেরবাদা, জয়নগর, সাহাপুর, আওতাপাড়া, চরসাহাপুর ও বাঁশেরবাদা ঢুকেই চোখে পড়ে সারি সারি লিচুর বাগান। লিচুর পাতার মাঝে সবুজ গুটি পুড়ে লালচে হয়ে ঝড়ে পড়ছে। বেশিরভাগ গাছের নিচে হাজার হাজার গুটি ঝরে পড়ে আছে।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত লিচু চাষী আব্দুল জলিল কিতাব মণ্ডল বলেন, চলমান টানা খরার কারণে গাছের লিচুর গুটি সব ঝড়ে যাচ্ছে। রাতে ও সকালে পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও ঠেকানো যাচ্ছে না। এবারে ফলন ভালো হওয়ায় ৬০০ কোটি টাকার লিচু লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাপদাহর কারণে প্রায় ৩০ ভাগ গুটি ঝড়ে পড়ায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান এরমধ্যে হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লিচুর গুটি ঝড়ে পড়ছে। গরমে সেচের বিকল্প নেই। এজন্য লিচু চাষিদের গাছে সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন উপজেলার বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখেছি এবং বেশি বেশি গাছে পানি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তাপদাহ আরও ১০ দিন অব্যাহত থাকলে চাষীদের বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
টিএইচ