শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

উদ্বোধনের ৫ মাসেও চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালের ইনডোর চিকিৎসা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 

উদ্বোধনের ৫ মাসেও চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালের ইনডোর চিকিৎসা

পৌনে ৩শ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় বেড়ে ৭শ কোটি টাকা এবং তিন বছরের প্রকল্প নির্মাণকাল এক যুগ পেরিয়ে গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরপর কেটে গেছে ৫ মাস তবুও ৫শ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনে ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়নি। 

এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যেই মেডিকেলের অস্থায়ী হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিন মেডিকেলের চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ১হাজার ইনডোর বা ভর্তি এবং প্রায় ২ হাজার আউটডোর বা বহির্বিভাগে আগত রোগীদের কাঙ্খিত সেবা ব্যাহত হচ্ছে। 

এমন অভিযোগ সমর্থন করেই অবিলম্বে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালুর দাবি রোগী ও চিকিৎসকদের। প্রকল্প নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন হস্তান্তর করলেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় হাসপাতাল চালু করা যাচ্ছে না বলে জানালেন কর্তৃপক্ষ।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার কলেজ শিক্ষক ইসারুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের ৫ জেলার জনগণের উন্নত চিকিৎসা সেবায় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। উদ্বোধনের পরও এখানে ইনডোর বা ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। তাই সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালু করে হাসপাতালের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠুক। 

সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র সদ্যজাত শিশু ওয়ার্ডের। এই ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স মুনিরা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও সিজারিয়ান প্রসুতি মায়েদের গড়ে ১০ থেকে ১৫টি সদ্যজাত শিশু জন্ম নেয়। অথচ প্রায় দশগুন বেশি ইনফ্যান্ট শিশুদের চাপ সামলাতে হয়। এসব শিশুরা অধিকাংশই আসে প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে। 

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা ভেঙে গুরুতর আহত গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের ট্রলিচালক আসাদুল হক তিনদিন পূর্বে ভর্তি হয়েছেন। সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন করে হাড়জোড়া লাগাতে হবে এমন কথা জানিয়ে এই রোগী বলেন, অর্থিকভাবে দুর্বল সেজন্যই কুষ্টিয়ার বাইরে না গিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার জন্যে ভর্তি হয়েছি। বড় বড় ডাক্তার স্যারেরাও আছেন, আমাকে দেখেছেন, তাতে আমি খুশি। কিন্তু এখানে দেখতেই পাচ্ছেন, লোকের গিজগিজি, পা ফেলার জো নেই।

টয়লেট ব্যবহার যোগ্য না। সিরিয়াল দিয়ে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হয়, শুনেছিলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নতুন হয়েছে, পরিবেশ ভালোই থাকবে। কিন্তু এখানে দেখছি পরিস্থিতি খুবই খারাপ।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রকিউর রহমান জানান, এখানে শিশুদের জন্য ২০টি বেডের বিপরীতে ২শ ৪০ থেকে আড়াইশ শিশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক নার্স নিজেরাই পর্যুদস্ত। নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে সাধ্যানুযায়ী সেবা দেয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই যদি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজস্ব ভবনে ইনডোর চিকিৎসা চালুু হয় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। 

 কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেই তো গুরুত্বপূর্ণ বা জীবনাশঙ্কায় থাকা রোগীর সঠিক ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হয়না। সেজন্য চাই অবকাঠামোগত সুবিধাসহ চিকিৎসা প্রাসঙ্গিক মনোরম পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র। মন্তব্য করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. নাসিমুল বারী বাপ্পী বলেন, সর্বোচ্চ সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থেকেও কাঙ্খিত উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ব্যাহত হচ্ছে এটাই বাস্তবতা।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ৫শ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালটিকে গত ১০ বছর ধরে ব্যবহার করতে গিয়ে এখানকার চিকিৎসা সেবার ত্রাহী অবস্থা। 

প্রতিদিন এখানে প্রায় ৯শ থেকে ১হাজার ইনডোর এবং প্রায় ২হাজার বর্হিবিভাগ সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এভাবে সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক রোগীদের মধ্যে সেবাবান্ধব ও আস্থার সম্পর্কে বিচ্যুতি ঘটছে। অন্যদিকে কাঙ্খিত উন্নত চিকিসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটা চালু হলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানালেন, ‘কিছু টুকিটাকি ফিনিসিং কাজ ছাড়া প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর চিকিৎসা সেবা চালু হতে। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ আনুসঙ্গিক সক্ষমতার মধ্যদিয়ে হাসপাতালে ইনডোর রোগীরে চিকিৎসা সেবা চালু হবে। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যেই তা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।

টিএইচ