শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post
ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফাঁস

কালিয়ার বড়দিয়া খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বদলী 

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি 

কালিয়ার বড়দিয়া খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বদলী 

নড়াইলের কালিয়ার বড়দিয়া খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা লিটন মণ্ডলের সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে অর্থ বাণিজ্য ও দালালদের সাথে ঘুষ দরবারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

তার অর্থ বাণিজ্যের টাকা তিনি কোথায় খরচ করেন তারও একটি ফিরিস্তি জানা গেছে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে। ভিডিওতে নিজের অফিসে বসে ঘুষের টাকা পেতে হুমকিসহ দালালদের নানা ধরনের ছবক দিয়েছেন গুদাম কর্মকর্তা লিটন মণ্ডল। 

সম্প্রতি ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে এরই মধ্যে গত সোমবার তাকে খুলনার মহেশ্বরপাশা সিএসডি খাদ্যগুদামে বদলী করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

ভিডিওতে  তিনি দালালদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘আপনাদের দেয়া টাকা আমি আলমারিতে তুলে রাখি না। আমারে কেউ ছাড় দেয় না। গত বুধবার ২২ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি ডিসি ফুড (জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) স্যারকে। আগের বৃহস্পতিবারে টিসিএফ (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) স্যার এখানে আসছিলেন। উনারে দিছি ১০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে উনি সই করবেন না, এটা ওটা বলতেছেন। উনারা তো কথা বলেন না। উনারা কাজে দেখায়। 

কথা প্রসঙ্গে লিটন মণ্ডল আরও বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আর আপনারা সবাই থেকে এই সিদ্ধান্ত (টনপ্রতি ১ হাজার টাকা) নিলেন। এখন যদি ধান না দেয় তাহলেও আর কাজ চলে না। তাহলে আমি আমার মতো চলি। 

সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে বড়দিয়া খাদ্যগুদামে টনপ্রতি ১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ তোলার পর ভিডিওটি ফাঁস হয়ে পড়ায় কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে আলোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানায়, প্রতিবছরের মত এবারও অ্যাপে লটারির মাধ্যমে সরকারি মূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য ৪ হাজার ৫০৬ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়েছে। একজন কৃষক ১ টন থেকে ৩ টন পর্যন্ত ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারবেন। এ বছর কৃষকের কাছ থেকে প্রতিমন ধান ১২০০ টাকা দরে কেনা হবে। ধান সংগ্রহ অভিযান গত ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে জানা যায়, এবছর উপজেলায় মোট ১ হাজার ৪৫৬ টন ধান সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বড়দিয়া খাদ্যগুদামে ৪১১ টন ধান সংগ্রহের জন্য ১৩৭ জন কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু গত ৩ মাসে গুদামটিতে মাত্র ১৮৬ টন ধান কেনা হয়েছে। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানাযায়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সেটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে গত ২৯ জুলাই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নড়াইল সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্তকমিটি গঠন করেছেন। কমিটি গত রোববার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর কতৃপক্ষ লিটন মণ্ডলকে খুলনার মহেশ্বরপাশা কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা ডিপোতে বদলীর আদেশ দিয়েছেন। 

উপজেলার খাশিয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম বরকত উল্লাহ বলেছেন, তিনি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অর্থবাণিজ্যের বিষয়ে কিছুই জানেন না। ধান ক্রয় সম্পর্কে বড়দিয়া খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার সাথে তার কোন কথা হয়নি। 

কালিয়ার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মো. মান্নান আলী ভিডিওতে তার সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য অস্বীকার করে বলেছেন, ওসিএলএসডি লিটন মণ্ডল তাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে তা নাম ভাঙানো মাত্র। বাস্তবে এর কোন সত্যতা নাই। 

তদন্ত কমিটির প্রধান নড়াইল সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র মুখার্জী বলেছেন, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে এবং লিটন মণ্ডলকে গত সোমবার শাস্তিমূলক বদলীর আদেশ দেয়া হযেছে।  

নড়াইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেছেন, বড়দিয়া গুদাম কর্মকর্তার ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। ভিডিওতে তাকে বুধবারে যে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ভিডিওটি দেখার পর তিনি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 

তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর লিটন মণ্ডলকে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানোর পর লিটনকে খুলনার মহেশ্বরপাশা কেন্দীয় খাদ্য নিরাপত্তা কেন্দ্রে বদলী করা হয়েছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে বা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি নিদৃষ্ট করে কিছুই বলতে পারেননি। 

টিএইচ