শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

কালীগঞ্জে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাশাপাশি দুটি সেতু অকেজো

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 

কালীগঞ্জে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাশাপাশি দুটি সেতু অকেজো

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে পাশাপাশি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত দুটি সেতু কাজে আসছে না। সামপ্রতিক বন্যায় দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতু দুটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

এতে প্রতিদিন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ। এর মধ্যে একটি সেতুর একপাশে দেয়া সামান্য মাটি পুরোপুরি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা এখন সেতুতে উঠছেন কাঠের ‘মই’ দিয়ে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনায় ত্রুটি ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় তাদের দীর্ঘদিনের ‘স্বপ্নের সেতু’ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সেতুটি পাইলিংয়ের বদলে বেজ ঢালাইসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নির্মাণ শেষ করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। 

অপরদিকে দুটি সেতুর উভয় পাশেই সংযোগ সড়ক তৈরিও করেনি সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণ কাজ চলাকালে এ বিষয়ে দাবি তুললেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার- প্রকৌশলীরা তা আমলে নেননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার বৈরাতী গ্রামের হাজিরহাট এলাকার একটি তিস্তা নদীর খালে সেতু দুটি তৈরি করা হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণের সেতুটি ‘রংপুর অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায়  ‘বড় আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার-ফুটব্রিজ’ নির্মাণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যর সেতুটি নির্মাণ কাজ পায় নেত্রকোনার ‘এ টি এল এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু কাজ পেয়ে ওই ঠিকাদার স্থানীয় আওয়ামী লীগ এক নেতার কাছে কাজটি বিক্রি করে দেন।  অপর দিকে ওই খালের পূর্ব-পশ্চিম দিকের ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে অর্থায়ন করে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। 

এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এটি নির্মাণের কাজ পায় আদিতমারীর মো. ইব্রাহিম নামের একজন ঠিকাদার। সেটিও স্থানীয় এক আ.লীগ নেতার কাছে বিক্রি করেন। যার ফলে দেড় কোটি টাকা সেতু ৫০ লাখ টাকার কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খালের তুলনায় দুটি সেতু হয়েছে আকারে ছোট, খালের মাঝামাঝি। ফলে লোকজনকে অনেকটা খালে নেমে এরপর সেতুতে উঠে পারাপার হতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা বন্যার পানি আসলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘ত্রাণের ব্রিজ’ হিসাবে পরিচিত সেতুর পূর্ব পাশে করা হয়নি সংযোগ সড়কের কাজ। সেখানে সামান্য যা মাটি ছিল তা ভেসে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। 

ফলে স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মই আকৃতির সিঁড়ি বানিয়ে অনেক কষ্ট করে সেই সেতুতে উঠছে। তবে সেখান দিয়ে কোনো ধরণের যানবাহন পারাপারের সুযোগ নেই। সেতুর পশ্চিম প্রান্তের মাটিও কিছুটা সরে গেছে। অপরদিকে বিএডিসি নির্মিত সেতুরও প্রায় একই হাল। দুই পাশের অনেক জায়গার মাটি সরে গেছে, লোকজন পারাপার করছেন খাল-পানি মাড়িয়ে। আবার সমন্বয়হীনতার কারণে পানি প্রবাহেও বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা বলছেন, দুই কতৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, ভূল পরিকল্পনা ও আকারে ছোট হওয়ায় দেড় কোটি টাকার সেতু দুটি এখন তাদের কাজে আসছে না। তাদের অভিযোগ, দুটি সেতু নির্মাণে অনিয়ম করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ত্রাণের ব্রিজ’ পাইলিংয়ের মাধ্যমে করার কথা থাকলেও সেটি না করে পিআইও’র সাথে যোগসাজশে বেজঢালাইয়ের মাধ্যমে কাজ করেছে স্থানীয় আ.লীগ নেতা ও ঠিকাদার।

সামপ্রতিক বন্যার পর পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় এমপি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জমান আমমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি করা হলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে ব্রিজ দুটি যাতে স্থায়ীভাবে তৈরি করে মানুষের যাতে আর কোনো ধরণের দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয় সেজন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। 

সেতু নির্মাণে পরিকল্পনা ত্রুটির কথা অস্বীকার করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণে তদারকিতে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, সমীক্ষা শেষেই সেতুটি করা হয়েছে। পাইলিং করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ করে দেবে ঠিকাদার।

অপরদিকে লালমনিরহাট বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন সেতু তৈরিতে অনিয়ম হয়নি দাবি করে বলেন, তাদের সর্বোচ্চ বরাদ্দের সেতুর দৈর্ঘ্য ৩০ মিটার ফলে পুরো খালজুড়ে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

টিএইচ