শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

কাশিমপুরে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে তিন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত 

কাশিমপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

কাশিমপুরে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে তিন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত 

গাজীপুরের কাশিমপুরে শিক্ষকদের রেষারেষির জেরে এসএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হলো ৩ শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ উঠেছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

জানা যায় মহানগরীর কাশিমপুরের ৪নং ওয়ার্ডের সারদাগঞ্জ এলাকায় মেরিগোল্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও অক্সফোর্ড কলেজ এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের রেষারেষির কবলে পড়ে জেরিন সুলতানা রোল নং ১, হাসনাত জাহান রক্সি রোল নং ৩ ও মো. সজিব ইসলাম রোল নং ১৩ নামের তিন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

পরীক্ষা দিতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

ভুক্তভোগী ৩ শিক্ষার্থী জানান, মেরিগোল্ড হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে তারা অক্সফোর্ড স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। নবম শ্রেণিতে মেরিগোল্ড হাইস্কুলে ভর্তি না হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষক কৌশলে ৮ম শ্রেণির কাগজপত্র দিয়ে তাদের নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে রাখেন। 

তোমাদের কোন সমস্যা হবে না। আমরা সব ঠিক করে দিব, অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষকদের এমন আশ্বাসের পরেও প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড হাতে পায়নি কোন শিক্ষার্থী। 
মেরিগোল্ড হাইস্কুলের প্রধান সেলিম স্যার ওই শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন আটকিয়ে দেয়ার কারণে তাদের ফরম পূরণ করতে পারিনি বলে জানান অক্সফোর্ড স্কুল প্রধান শাহীন স্যার। ১, ৩ ও ১৩  রোল নং ধারী এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। 

শায়লার বাবা আ. ছালাম জানিয়েছেন, বিষয়টি জানার পর আমি কয়েকবার সেলিম স্যারের কাছে টিসি আনতে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে আমি ১৮ হাজার টাকা সুদ করে এনে স্যারের কাছে গিয়েছি। কিন্তু সেলিম স্যার কম বলে টাকা রাখেনি আর টিসিও দেয়নি। পরে অক্সফোর্ড স্কুলের শাহীন স্যারকে বিষয়টি জানালে টিসি আনতে হবে না বলে জানান তিনি।

অক্সফোর্ড স্কুল ৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণে ব্যর্থ বলে জানালে, অভিভাবকরা ফরম পূরণের শেষ মুহূর্তে মেরিগোল্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সেলিম স্যারের কাছে গেলে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ৬২ হাজার টাকা করে দাবি করেন। 

জেরিনের মা মহসিনা বেগম বলেন, শায়লার বাবা বিভিন্নভাবে ৫২ হাজার টাকা জোগাড় করে পরীক্ষা দিতে পারলেও, সহায় সম্বলহীন সামান্য আয়ের সংসার চালানো আমাদের ৩ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বাচ্চাদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমরা এত টাকা ব্যবস্থা করতে পারিনি। ২৫ হাজার টাকা দিতে চাইলেও কম হবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। আমার মেয়ের রোল নং ১, তার মুখের দিকে চেয়েও তাদের মন গলেনি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মহসিনা।

মেরিগোল্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক সেলিম বলেন, দুই বছর তারা স্কুলে না এলেও যেহেতু আমি রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছি, আর তারা কেউ টিসি নেয়নি তাই আমার ছাত্র হিসেবে ২ বছরের বেতন আমি দাবি করছি।

গাফিলতি ও অক্ষমতার কথা স্বীকার করে অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন।

এবিষয়ে ৪নং ওয়ার্ড কেজি স্কুল এসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্টারিহল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক ঈসমাইল দেওয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক মাছরাঙা পাবলিক স্কুলের প্রধান বাদল পারভেজ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে মানবিক দৃষ্টিতে হলেও পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার উচিত ছিল। 

অক্সফোর্ড স্কুলের দুই শিক্ষক জানান, কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীসহ মেরিগোল্ড হাইস্কুল থেকে আমরা অক্সফোর্ড স্কুলে চলে আসি। সে ক্ষোভ থেকেই সেলিম স্যার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে তাদের ওপর অমানবিকভাবে প্রতিশোধ নিল।

এব্যাপারে গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিএইচ