গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার শুরুতেই কাশিয়ানী উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল-বিলে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, ভেসাল, বেহুন্দী জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকারীরা বেপরয়াভাবে মাছ শিকার করছে।
বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাছ ডিম ছাড়ার আগেই শিকারিদের জালে আটক হচ্ছে। ফলে দেশীয় মাছ তাদের বংশ বিস্তার করতে পারছে না। এতে দিন দিন দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। দ্রুতগতিতে কাশিয়ানী উপজেলা এলাকা দেশীয় মাছশুন্য হয়ে পড়ছে।
এক সময়ের এই এলাকায় বোয়াল, শোল, গজার, কৈ, শিং, মাগুর, স্বরপুটি, ক্যালকে টাটকেনি, বাচা, গাইড়ো, বাঁশপাতা, মাগুর, রুই, কাতল, মৃগেল, টেংরা, পুটি, রয়না, গুইতে, বাইম, টাকি, খলসে, আইড়, চিংড়ি, রিটা, বেলে, পাবদা, কালিবাউস, রঙিন বেতাগা, মলা ঢেলাসহ প্রায় অর্ধশত প্রকার জনপ্রিয় দেশীয় মাছ এখন প্রায় বিলু্প্তর পথে। এর মধ্যে বাঁশপাতা, স্বরপুটি, বোয়াল, রিটা, পাবদা, রয়না, আইড় দেখা পাওয়াই সৌভাগের ব্যাপার।
এলাকাবাসী জানায়, বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই অসাধু লোকজন সরকার নিষিদ্ধ ইলেক্ট্রিক শর্ট, কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, ভেসাল, বেহুন্দী জাল, সুতিজালের অবাধ ব্যবহারে মাছের প্রজনন শেষ করে দেয় এবং এসব জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিমসহ শিকার করে নেয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পুকুর মালিকরা তাদের পুকুর একাধিকবার সেচ দিয়ে মাছ ধরে। আবার এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন সরকারি খালগুলি ক্ষমতা খাঁটিয়ে বিক্রি করাসহ অবৈধ্যভাবে সেচ দিয়ে মাছ ধরে ফেলে। ফলে মাছের নতুন প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
একদিকে সরকারি নিষিদ্ধ জালের অবাধ ব্যবহার অন্যদিকে কৃষি জমিতে সার ও কিটনাশকের ব্যবহারে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দেশীয় মাছ রক্ষা ও অবৈধ্য জাল ব্যবহার বন্ধে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইউএনও মু. রাসেদুজ্জামান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়েনের গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) একত্রিত করে সমাবেশের মাধ্যমে অবৈধ্য জাল ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে রাজপাট ও পারুলিয়া ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশদের অভিযান চোখে পড়ার মত। অবৈধ্য জাল উচ্ছেদ অভিযান করার অপরাধে রাজপাট ইউনিয়নের এক গ্রাম পুলিশের ছেলে জাল মালিকদের মারধরের স্বীকার হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় এবছরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে দুই হাজারের বেশী ম্যাজিক জাল আটক ও ধ্বংস করেছেন। এসব পদক্ষেপ নিলেও কোন প্রকার লাভ হচ্ছে না। দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে এ সব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় জানান, দেশীয় মাছ রক্ষার জন্য ইউএনও মু. রাসেদুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এদর নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।
টিএইচ