কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল জুড়ে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান ও খড় ভালোভাবে শুকিয়ে বাড়িতে তুলতে পারছেন বোরো চাষিরা। আসা করা যাচ্ছে সপ্তাহ দু-এক দিনের মধ্যে সব বোরো ধান কাটা ও মাড়াই করে সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন বোরো ধানের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় বোরো জমির ধান পেকে সোনালী রঙে শোভা ছড়াচ্ছে জমিতে। অন্যদিকে আলু উত্তোলনের জমিতে লাগানো বোরো ধান সবুজ হয়ে বেড়ে উঠছে।
বৈশাখের শুরুতেই সু-বিশাল হাওর অঞ্চলের ইটনা উপজেলার বিভিন্ন হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটার ধুম পড়েছে। হাওড়বাসীর স্বপ্ন পুরণ হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে ধান কাটার শ্রমিক সংকট ও দুর হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার প্রকৃতিক দূর্যোগ প্রতিকূল আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে হাওরের কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের চাষাবাদী জমির উৎপাদিত ফসল হাঁসি মুখে সোনালী ধান কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে কেটে অগ্রাহায়ণ মাসের মত রৌদ্রে শুকিয়ে ঘরে তুলছে।
জানাযায় বি,আর ২৮, ২৯, ৮৯, ৯২ ইত্যাদি জাতের ধান ফলনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তেমন ফলন হয়নি, হাইব্রিড উন্নত জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত রোববার এ প্রতিনিধি ইটনা উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শনকালে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায় এবার হাইব্রিড জাতীয় ধান বাম্পার ফলন হয়েছে যেমন তেমন সরকারিভাবে প্রতিকেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা ও প্রতি কেজির চালের মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার হাওরের কৃষকরা সরকারের কৃষি বিভাগের দেয়া কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কেটে বস্তা ভরে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম অলয়েদার সড়কে তুলে শুকিয়ে কৃষক হাঁসি মুখে ঘরে তুলছে সোনালী ধান।
কৃষকরা জানান, এবার আগেই বহিরাগত শ্রমিক আসায় এলাকার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে গতবারের মতো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না কৃষকদের। গতবছর বহিরাগত শ্রমিকরা না আসার কারণে স্থানীয় শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো শ্রমের মূল্য বাড়িয়ে নিয়ে করেছিলেন ধান কাটা কাজ। ফলে শ্রমিক নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল কৃষকদের।
জেলার কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। ধান কাটতে মিঠামইনে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার নামানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাওরের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
কৃষক হোসেন আলী জানান, বর্তমানে কৃষকের বাড়ি থেকে জমির দূরত্ব ভেদে মণ প্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি ধান পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে ধানকাটা শুরু করেছে। এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা বিঘায় ধান কাটাচ্ছেন। কিন্তু হারভেস্টার মেশিন দিয়েও বিঘায় ২ হাজার টাকা খরচে ধান কাটা গেলেও বেশির ভাগ খড় নষ্ট হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্যের কথা চিন্তা করে অনেকেই কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। তাই কৃষি শ্রমিকের চাহিদাও বেশি।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে দ্রুত ধান পেকে যাচ্ছে। বৈশাখের শুরু থেকেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধান বেশ ভালো হয়েছে। আর যেসব এলাকায় ধান বেশি পেকেছে সেই সব এলাকায় হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
টিএইচ