কুমিল্লার কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন নবাগত জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা, পিপিএম।
বুধবার সকালে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা কুমিল্লার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এ সময় পুলিশ সুপার জেলার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নসহ কুমিল্লার নাগরিকদের ভাল রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি নাগরিক সমাজের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক এবং কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনে থোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন, কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজেশ বড়ুয়াসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন শেষে কুমিল্লার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জানা যায়, পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম, ২৫তম বিসিএস (পুলিশ) এর মাধ্যমে ২০০৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান, রাজশাহীতে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সর্বপ্রথম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব-৫) পদায়ন লাভ করেন।
তারপর র্যাব-৭ চট্টগ্রামে আড়াই বছর কর্মরত ছিলেন। পরে বরিশাল জেলার গৌরনদী সার্কেল ও ঠাকুরগাঁও সদর সার্কেলের এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আইভরি কোস্টে দায়িত্ব পালন করেন।
শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করে তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে পদায়ন লাভ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটে তিনি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় তিনি এডিসি হিসেবে গুলশান ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও মতিঝিল ডিভিশনে ট্রাফিকের এডিসি, ওয়ারী ডিভিশনে ট্রাফিকের ডিসি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অনির্বাণ চেতনায় উদ্ভাসিত এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিটি কর্মস্থলেই দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হন।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট থেকে তিনি দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দুই বছর সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
গত ৯ জুলাই তিনি কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। কর্মজীবনে অসাধারণ কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ এই চৌকস কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম, পিপিএম ও একাধিকবার আইজিপি ব্যাজ অর্জন করেন।
উল্লেখ্য, তিনি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সততা, কর্মদক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে উত্তম ব্যবহারসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হন।
পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম ১৯৭৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনা শহরের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আব্দুল মজিদ এবং মাতা রাজিয়া বেগম। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। তার সহধর্মিণী মোছাম্মৎ আসমা ইসলাম পাপড়ি পেশায় একজন শিক্ষক।
পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম পাবনা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
টিএইচ