শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

কুষ্টিয়ার নদী ভাঙন এলাকা রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাস

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার নদী ভাঙন এলাকা রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাস

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙন রোধ ও বন্যার হাত থেকে রক্ষায় নদীপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহালবাড়িয়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়নে ৯ কি.মি এবং কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়ন অংশে ১.৫৩ কি.মি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে একনেকে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে অকাল বন্যায় নদী ভাঙন ও ফসল নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদীপাড়ের মানুষ। এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবছর মিরপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়। 

এতে পদ্মার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পদ্মাপারের বহালবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর, খাদেমপুর, তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া, বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগরসহ আশপাশের কমপক্ষে লক্ষ্যাধিক মানুষের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। প্রতিবছর বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে কপাল পোড়ে এলাকার কৃষকদের। এতে এলাকার কৃষকরা সারা বছর অর্থকষ্টে ভোগেন। এ কারণে এলাকাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পদ্মানদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ। 

এরপর আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হন। এদিকে একনেকে বাঁধ নির্মাণের বিল পাস হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও আ.লীগ নেতাকর্মীরা। 

পদ্মাপাড়ের মির্জানগর, সাহেবনগর ও খাদেমপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন জায়গায় জিও ব্যাগ, ব্লক বসিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশেই ফসলের মাঠ থেকে বাঁধ অনেকটা উঁচু। আবার কোনো কোনো জায়গায় পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল কেটে পানি বের করে দেয়া হয়েছে। নদী থেকে ১০০মিটার দূরেই মীর আব্দুল করিম কলেজ। ১৯৯৭   সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ  লাগোয়া কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। অব্যাহত নদী ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে এই কলেজ ও মহাসড়ক। 

বহালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর নুরুন্নাহার ডালিম বলেন, নদীর এই বাঁধের পুরো অংশ স্থায়ীকরণ করা হলে নদী থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বাড়ি-ঘর বিলীনসহ ফসলিজমি নষ্ট হবে না। 

মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আজিজুল সর্দার বলেন, বাঁধ নির্মাণ হলে আমাদের অনেক উপকার হবে। এখন আর সহজে ফসল পানিতে ডুবে যাবে না। সরকার আমাদের দিকে চেয়ে দাবি পূরণ করেছে। আমরা এলাকাবাসী সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। বহালবাড়িয়া গ্রামের হানিফ মণ্ডল বলেন, বাঁধ নির্মাণ হবে, এ কথা শোনার পর আমরা খুবই খুশি। 

এখন আর আমাদের কষ্টার্জিত বাড়ি-ঘর ও ফসল নষ্ট হবে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কারণে অকাল বন্যার হাত থেকে আমাদের এলাকার মানুষ রক্ষা পাবে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনকারী রাজিব আলী বলেন, পদ্মানদীর ভাঙনে জীবন শেষ। তাই এ বাঁধ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। এটাই এখন পদ্মাপাড়ের মানুষের পরম পাওয়া। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, শক্তিশালী ও স্থায়ীকরণে বাঁঁধ নির্মাণে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করছি জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো। 

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, পদ্মাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল   আলম হানিফের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নদী ভাঙন থেকে থেকে রক্ষা পাবে।

টিএইচ