ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব, পদ্মা ও গড়াই নদী পানিশূন্য, দেশের বৃহত্তর জিকে প্রকল্প বন্ধ হয়ে থাকার কারণেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ মানুষগুলো। ৬-৭ ফুট ডিপ করে মোটর দিয়েও টিউবওয়েল থেকে পানি উঠাতে পারছে না। হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলো পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি সংকট মিটাতে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির তোলা হলেও ওই গভীর নলকূপ দিয়েও পানি উঠছে কম।
পৌর এলাকায় পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিই একমাত্র সম্বল। তাছাড়া গ্রাম এলাকায় পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ দূর দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রচণ্ড তাপদাহে কৃষকরা মাঠের ফসল ফলাতেও পারছেন না। প্রচণ্ড তাপে মাঠের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েও পানি না পাওয়ায় ফসলে সেচ দিতে পারছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়া বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, গত ১০ বছরে পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। আগে ১৬ থেকে ১৮ ফুটে পানির লেয়ার পাওয়া গেছে সেখানে চলতি বছরে ২৬ থেকে ২৮ ফুট নিচে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা পৌরসভা পানি সংকটের হাত থেকে পৌরবাসীকে রক্ষা করতে পানির লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। তবে এখনো অনেক এলাকায় পানি সরবরাহের পাম্প বসানো হয়নি। ফলে পৌরসভার পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক এলাকার পৌরবাসী।
কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় প্রায় ৫ হাজারের ঊর্ধ্বে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। তবে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়াই ওই সব টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বাড়ির নারী-পুরুষেরা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে পানি সংগ্রহ করছে। এতে করে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গ্রাম বাংলার পুকুর ডোবা, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির আরও সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়।
এদিকে কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি হওয়ায় তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে খামারের মুরগি, বিভিন্ন স্থানে পশু-পাখি মারা যাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এমনই এক পরিস্থিতি আকার ধারণ করেছে। রোগীদের চাপ সামলাতে ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পা দেয়ার জায়গাটুকু নেই। এ যেন এক ভয়াবহ মহামারি সৃষ্টি হয়েছে।
টিএইচ