শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

কুষ্টিয়ায় ব্রিজ নির্মাণ না করেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় ব্রিজ নির্মাণ না করেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ 

কুষ্টিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) টেন্ডারকৃত দুটি ব্রিজ নির্মাণের বেধে দেয়া সময় পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওই ব্রিজ দুটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারে নি। ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। 

পরে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হলেও এখনো কাজ শুরু করেনি ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ দু’টি নির্মাণ না হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া-ঝাউদিয়া হয়ে আলমডাঙ্গা সড়কটি খানাখন্দে রূপধারণ করার পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠি পড়েছে বেকায়দায়। 

২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১মার্চ ২০২১ বৃত্তিপাড়া হাট আরএন্ডএইচ জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া হাট সড়কে ১৪শ মিটার চেইনেজে ৮১ মিটার প্রিস্টেসড গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, বাংলাদেশ আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ। 

বাস্তবায়ন করছেন এলজিইডি কুষ্টিয়া সদর। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ প্রথম দিকে কিছুটা কাজ করা হলেও পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখেনি। কবে শেষ হবে এ ব্রিজ নির্মাণ তাও কেউ জানে না। 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কের বিত্তিপাড়া হতে ঝাউদিয়া বাজার যেতে উজানগ্রাম এলাকার গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের উপর ২৫ কিমি. দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের আদেশ দেয়া হয়। এই ব্রিজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। 

একই বছরের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শেষ করার কথা। নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০%। ওই সেতু থেকে মাত্র এক কিমি. দূরে একই সড়কের কুমার নদীর উপর ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। 

এই সেতুটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয়ার পর চলতি বছরের ৮ মার্চ সেতু নির্মাণ শেষ হওয়াার কথা। কিন্তু কাজ হয়েছে আনুমানিক মাত্র ৩০%। শুধুমাত্র কয়েকটি পিলার দেখা যাচ্ছে। 

দীর্ঘ এক বছর কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার ঈদুল আযহার আগে সামান্য রডের খাচা নির্মাণ করে শুরু করে কাজ চলমান দেখিয়ে  প্রায় ৩ কোটি টাকা অগ্রিম তুলে নেন। সেতু দুটি নির্মাণের কাজ পান কুষ্টিয়ার সৈয়কত এন্টারপ্রাইজ পরে কাজ পাবনা জেলার এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া। সোমবার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে ব্রিজ দুটি দেখতে গেলে এলাকাবাসী জানান, কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ড ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে এই সড়ক। 

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে। সেতু দুটি নির্ধারিত সময়ে তৈরি না হওয়ায় ওই সব মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে চরম পর্যায়। সেতু দুটি নির্মাণের সময় পার হলেও শুধুমাত্র কয়েকটি পিলার ও রড খাড়া হয়ে আছে। 

বিষয়টি নিয়ে এলাকার আলী আকবর বলেন, বাবারে আপনারাতো স্বচক্ষে দেখচ্ছেন সেতুর কি হাল অবস্থা। প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে কোন কাজই হচ্ছে না। হঠাৎ ২/১জন লেবার আসে কি করে আবার চলে যায়। সেতু নির্মাণের কোন কাজই হচ্ছে না। 

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুজ্জামান মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে গেলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এলজিইডি সাবেক কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মণ্ডল বলেন, কাজ ধীরগতিতে চলছে এটা আমরা জানি। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যা থাকায় তিনি সময়মত কাজ করতে পারেনি।  কাজের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ বন্ধ হয়নি।

এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলী জানান,  ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে। 

টিএইচ