কুড়িগ্রাম জেলায় প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে চরাঞ্চলের অসংখ্য পরিবার । বিনষ্ট হয় চরের মানুষের কৃষি ফসল। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার চরাঞ্চলে ত্রাণসহ বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকার ৪২০টি পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে।
তারা দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে এসেছে। সংস্থাটি চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ভেড়া প্রদান, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন, রাসায়নিক মুক্ত সবজি চাষ, বাল্যবিয়ে, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিয়ে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বিষয়ে আইনি পরামর্শ র্দিয়ে থাকেন।
সংস্থাটি প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ১৪টি চরের ৪২০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসব্জির বীজ দেয়া ছাড়াও ভেড়া বিতরণ করেছে। এছাড়াও বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে।
শনিবার (০৯ নভেম্বর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় চর ভগবতিপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই গ্রামের ৩০টি বন্যা কবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।
চর ভগবতিপুর গ্রামের উপকারভোগী জরিনা বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে ৪ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া কিনে দিয়েছে এবং সেটি থেকে ২টি বাচ্চা হয়েছে। আমার এখন ৩টি ভেড়া যার বর্তমান বাজারমূল্য ২৭ হাজার টাকা।
ফ্রেন্ডশিপচের ট্রান্সজিশনাল ফান্ড প্রজেক্টের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ১৪টি চরে এ বছর ৪২০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করেছে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তা উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্নক সহযোগিতা করবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।
টিএইচ