কারও স্বামী প্রবাসী, কারও স্বামী দিনমজুর কিংবা ভ্যানচালক। তবুও এদের মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা নিচ্ছেন অন্তত অর্ধশতাধিক নারী। শুধু তা-ই নয়, বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ভাতার ক্ষেত্রেও মানা হয়নি সরকার প্রদেয় নীতি। এমনি চিত্র পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।
জানা গেছে, উপজেলায় মোট বয়স্ক ভাতা ১৫৭০৬ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ৪৮৮০ জন ও ভাতা প্রাপ্ত বিধবার সংখ্যা রয়েছেন ৬ হাজার ৯০৪ জন। অথচ এর মধ্যে নারীর স্বামী জীবিত রয়েছেন ৫০জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জীবিত স্বামী বিধবার ভাতার সংখ্যা রয়েছেন ৭ নং হিরণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে।
এ বিষয়ে স্বামী জীবিত থাকার পরও বিধবা ভাতার টাকা উত্তোলন করা হেনা বেগম, শিরিন খানম, রেখা বেগম, রিনা বেগম জানান, হিরণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবু মুছা মেম্বার আমাদের অসহায় ভাতা করে দেবেন বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা ও আইডি কার্ড নেন।
আমরাতো জানি অসহায় ভাতা পাই কিন্তু এটা যে বিধবা ভাতা আমরা জানি না। এছাড়াও জানা যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরাও টাকার বিনিময়ে স্বামীকে মৃত্যু দেখিয়ে নারীদের বিধবা ভাতা করে দেন।
চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। তারা বলছেন, এমন অনিয়মের কারণে প্রকৃত বিধবারা সরকারি এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা এর সাথে জড়িত তাদের কঠিন বিচারের দাবি জানায়।
এ বিষয়ে হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন, আমার হিরন ইউনিয়নে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে লাইফ ভেরিফিকেশন হয়। এই ভেরিফিকেশনে যারা প্রকৃত ভাতাভূগী তারা উপস্থিত হয়। কিন্তু যারা প্রকৃত ভাতাভোগী না তারা উপস্থিত হয় নায়। তখনই আমার সন্দেহ হয়। আমি সাথে সাথে ওই ওয়ার্ডগুলোতে মেম্বার, চকিদার, দফাদারকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য তাগিদ দেই।
খোঁজখবর নিয়ে দেখা যায় ৩নং ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন বিধবা ভাতার টাকা উত্তোলন করে এদের প্রত্যেকের স্বামী আছে। বিগত নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান মেম্বার ছিলেন তারা এই অনিয়মগুলি করে গেছেন। এখন ওই ভাতাগুলি কেটে প্রকৃত যারা ভাতা পেতে পারে তাদের ভাতার আওতায় আনব।
কোটালীপাড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল ইসলাম শুভ জানান, ঘটনার সত্যতা রয়েছে। ইতোমধ্যে লাইভ ভেরিফিকেশন শুরু হয়েছে। তাছাড়া ৫০ জন নারীর স্বামী জীবিত থাকা সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছে। ওই নারীদের স্থলে অন্য নারীদের প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এ তদন্ত শুধু একটি ইউনিয়নে নয়, উপজেলার সবই ইউনিয়নে চলবে।
টিএইচ