গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা বিছানোর জন্য খেঁজুর পাতার পাটি বুনন করে থাকেন। খেঁজুর পাটি এক সময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরের জন্য ছিল একটি নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ।
কলের যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের পূর্বে হাতে তৈরি যে সকল পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবহার্য উপকরণ ছিল তার মধ্যে খেঁজুর পাটি ছিলো অন্যতম। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা অবসর সময়ে খেঁজুর পাটি বুনিয়ে থাকেন। যা ধান শুকানো, বিছানা, নামাজ পড়া, খাওয়া-দাওয়া করা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হতো।
কিন্তু কালের আবর্তে আজ খেঁজুর পাটি হারিয়ে যাওয়ার পথে। এর জায়গা দখল করেছে নেটের জাল, রেক্সিন ও সিনথেটিক্স জাতীয় উপকরণ। এক সময় অবসর সময়ে এক জায়গায় হয়ে গ্রাম বাংলার নারীদের খেঁজুর পাটি বুনানোর দৃশ্য দেখা গেলেও বর্তমানে এমন দৃশ্য আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আদিবাসী নারীরা খেঁজুর পাটি বুনানোর এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন।
সম্প্রতি উপজেলার মাটিন্দর ইউনিয়নের মাহিলীপাড়া ও আকবরপুর ইউনিয়নের উষ্টি আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। কয়েকজন নারী এক জায়গায় বসে খেঁজুর পাটি বুননের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আলাপচারিতায় তারা জানান, আগে এলাকায় অনেক খেঁজুর গাছ ছিল বলে প্রায় সকল নারীই অবসর সময়ে খেঁজুর পাতার পাটি তৈরি করতেন। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় খেঁজুর গাছের পরিমাণ কমে যাওযায় পাতার অভাবে আর তারা সেভাবে খেঁজুর পাটি তৈরি করতে পারেন না।
বাজারে বিক্রয়ের জন্য নয়, নিজের পরিবারের ব্যবহারের জন্য তারা খেঁজুর পাটি তৈরি করছেন। তবে খেঁজুর পাটি তৈরি করে বাজারজাতকরণের সুযোগ আছে বলে তারা জানান। একজন নারী মাঠের কাজ না করে শুধু পাটি বুননের কাজ করলে ৪-৫ দিনের মধ্যে একটি করে খেঁজুর পাটি বুনাতে পারবেন বলেও তারা জানান।
উপজেলার মাটিন্দর মাহিলীপাড়ার বাসিন্দা লিপি পাহান বলেন, ‘পাটি বোনার জন্য প্রথমে খেঁজুর পাতার ডাল কেটে ৪-৫ দিন কড়া রৌদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ডালগুলো পাতা থেকে ছড়িয়ে নিতে হবে। পাতাগুলো গোড়ার বোটার অংশ এবং সামনের দিকে ছুঁচালো কাটার অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে।
এরপর পাতাগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এই দু’ভাগ পাতাগুলোকে প্রয়োজন মতো চিকন করে পাটি বুননের উপযোগি করে তৈরি করতে হবে। একটি পাটি তৈরি করতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। আর যার বিক্রয় মূল্য প্রকারভেদে ৩০০-৭৫০ টাকা। তবে শ্রম ছাড়া পাটি তৈরি করতে আর কোন প্রকার খরচ হয় না।’
পত্নীতলা উপজেলা জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি সুমন কুমার শীল বলেন, ‘আমরা যার যার অবস্থান হতে একত্রিত হয়ে খেঁজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলে একদিকে বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া খেঁজুর গাছ রক্ষা পাবে। অন্যদিকে, এই ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর পাতার পাটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
টিএইচ