রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post
বিফলে ১৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন

গাইবান্ধার শতকোটি টাকার নৌ টার্মিনাল অকেজো

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার শতকোটি টাকার নৌ টার্মিনাল অকেজো

উত্তরের আট জেলায় যোগাযোগ সহজ করতে গাইবান্ধার বালাশী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে ফেরি সার্ভিসের জন্য নেয়া হয়েছিল মেগা প্রকল্প। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুঘাটে নির্মাণ করা হয় টার্মিনাল। কিন্তু ওই নৌরুট ফেরি চলাচলের অনুপযোগী বলে জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। লঞ্চ সার্ভিস চালু করলে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাট চালু হয়। এ দুঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৯০ সালে নদীর নাব্য সংকটের অজুহাতে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার উজানে বালাশীতে। 

নতুন করে সেখানেও ব্যয় করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নির্মাণ করা হয় ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন থেকে বালাশীঘাট পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ। সেখানেও কয়েক বছর চলার পর যমুনায় নাব্য হ্রাসের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে পুরোপুরি এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রয়োজনের তাগিদে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতেন এ অঞ্চলের মানুষ। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর যানবাহনের চাপ কমাতে বিকল্প পথ তৈরির যুক্তি দেখিয়ে ২০১৪ সালে বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট চালুর লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকের সভায় বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটটি আবারও চালু করতে ফেরিঘাট টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে দুই দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দাঁড়ায় ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। 

২০২১ সালের মধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ হলে হঠাৎ করে বিআইডব্লিউটিএর কারিগরি কমিটি নাব্য সংকট ও ২৬ কিলোমিটার বিশাল দূরত্বের নৌপথসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে নৌরুটটি চলাচলের অনুপযোগী বলে ঘোষণা করে।

পরবর্তিতে চলতি বছর যাত্রী পারাপারে পরীক্ষামূলকভাবে এ নৌরুটে চারটি ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু করলেও নাব্য সংকটে এখন তা চলছে না। ফলে সরকারের মেগা প্রকল্প থেকে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। 

সরজমিনে বালাশীঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আধুনিক ডিজাইনের মসজিদ, খাবার হোটেল, আনসার ব্যারাকসহ বেশকিছু নান্দনিক স্থাপনা। তবে এতকিছুর মধ্যে শুধুমাত্র খাবার হোটেল চালু থাকলেও অন্যসব কিছু রয়েছে বন্ধ। তাই সরকারের এতটাকা ব্যয়ে নির্মণাধীন দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোগুলো এখন জনমানবহীন পড়ে আছে। 

বালাশীঘাটে থেকে জামালপুরে যাওয়ার জন্য নৌকার জন্য অপেক্ষারত সিয়াম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহে চাকরি করি। আমরা আগে নিরাপদে এ নৌরুটে পারাপার হতাম ফেরিতে। বর্তমানে কয়েকটি ছোট লঞ্চ চলাচল করছিল। কিন্তু সেগুলোও এখন বন্ধ। এ কারণে আমাদের নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হতে হচ্ছে।’

অপরদিকে সাঘাটা ফুলছড়ি আসনের এমপি মাহামুদ হাসান রিপন আমার সংবাদকে বলেন, এ নৌরুটে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট কয়েকটি লঞ্চ চলাচল শুরু করলেও নদীতে চর ভেসে ওঠায় লঞ্চগুলো আর চলাচল করতে পারছে না। এ নৌরুটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যদি দেখা হতো তাহলে দুপাশের মানুষ দ্রুত তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।’

টিএইচ