শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

গাইবান্ধায় বিএডিসির সেচ অনিশ্চয়তায় ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধায় বিএডিসির সেচ অনিশ্চয়তায় ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ!

ইরি-বোরো চাষের উৎকৃষ্ট সময় পার হলেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পানি সরবরাহে কার্যকরি পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ। জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন, এমনকি পানি সরবরাহে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-৩ আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতির নিকট পত্র প্রেরণ করেও মিলছে না সমাধান। 

চাহিদামত ঘুষ না দেওয়ায় বসানো হচ্ছে না মেশিন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এঅবস্থায় নদী ভাঙন ও অবহেলিত এই এলাকার অন্তত দুইশ কৃষক পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও। 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে (১৯৭৪) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ৩নং দামোদরপুর ইউনিয়নের  উত্তর দামোদরপুর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরন্নবী সরকারের নিজস্ব জমিতে স্থাপন করা হয় বিএডিসির ডিজেল ইঞ্জিনচালিত একটি গভীর নলকূপ (সেচ পাম্প)। পরবর্তীতে একটি দুর্ঘটনায় ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বন্ধ থাকলে, বাধ্য হয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে শ্যালো মেশিনে অনেক কষ্টে চাষাবাদ করে আসছে কৃষকরা। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপক আধুনিকায়ন হয়ে কৃষি চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

পরে গভীর নলকূপটি (সেচ পাম্প) পূনরায় চালু করতে দফায় দফায় গাইবান্ধার বিএডিসি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও কোনও কর্ণপাত করেন না বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে কৃষকদের স্বার্থে বন্ধ থাকা গভীর নলকূপটি, বিদ্যুতের সাহায্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) মাধ্যমে চালু করতে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের পক্ষে লিখিত আবেদন করেন ওই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক নুরুন্নবী সরকার। 

এছাড়া বিষয়াদী অবগত হয়ে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেন সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতিও। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসি উর্মি স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নির্দেশ করা হয়। কিন্তু নলকূপটি বিএমডিএ চালু করার কথা জানতে পেরে বিএডিসি নলকূপটি তাদের দাবি করে এবং তারাই নতুন করে চালু করবে বলে জানায়। 

পরে আবেদনকারী, বিএমডিএ ও বিএডিসিকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করে তিন দিনের মধ্যে বিএডিসিকে নলকূপ চালু করতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। অথচ তার নির্দেশের তিন সপ্তাহ পার হলেও বিএডিসি পানি সরবরাহে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অন্তত শতাধিক বিঘা জমি পানির অভাবে এখনও অনাবাদি পড়ে আছে। বয়স হওয়ায় পঁচে-নষ্ট হচ্ছে চারাগাছ (বেছন)। স্বচ্ছল পরিবারগুলোর কেউ কেউ চাষের মৌসুম পার হওয়া আর চারাগাছ নষ্টের হাত থেকে রক্ষায় শ্যালো মেশিন থেকে বেশি দামে ঘণ্টা হিসেবে পানি নিয়ে চাষাবাদ করছেন। কেউ কেউ পানি দিচ্ছেন নালা থেকে। 

এছাড়া আশেপাশের সবকটি এলাকাঘুরে দেখা যায় কৃষকরা চড়া দামে ডিজেল ক্রয় করে, শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। তবে, বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপটি চালু করা হলে ওই এলাকার অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করে ২০০ থেকে ২৫০টি কৃষক পরিবারের চাষাবাদের খরচ অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় কৃষকসহ আবেদনকারী কৃষক নুরুন্নবী আকন্দ বলেন, এই এলাকার চাষাবাদের বড় মৌসুম ইরি-বোরো। আর সেই সময়ে চাষাবাদ না করতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে কৃষকদের। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপটি চালু করে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার দাবি তাদের।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী চিত্তরঞ্জন রায় আমার সংবাদকে বলেন, তারা চাচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ। বিদ্যুতের বিষয়টিতে কয়েকটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট রয়েছে, সেটি প্রক্রিয়াধীন, তাতে সময় লাগবে। 

এছাড়া তিনি বলেন, কেউ চাইলেই গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। ওখানে নলকূপটি ছিল ২৫ বছর আগে, এই ব্যবধানে নিয়ম-কানুন, অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। 

তবে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরেই সেখানে ডিজেলচালিত মেশিন চালু করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু কৃষকরা তাতে রাজি নন বলে দাবি নির্বাহী প্রকৌশলীর। টিএইচ