তিন জনের সংসার। এক দিন কাজে না গেলে চুলা জ্বলে না। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চলে না। গত ৪ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল কাজের জন্য। কাজ শেষে দুপুরে বাড়ি ফিরবে বলেছিল। পরের দিন ফিরছে, তাও লাশ হয়ে। পেটে ও মাথায় গুলি নিয়ে।
কথাগুলো বলছিলেন, গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের গুলিতে মারা যাওয়া নিহত রিয়াজুল ফরাজীর স্ত্রী রুমা আক্তার।
রিয়াজুল ফরজী মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরাজীর ছেলে। গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি পেশায় একজন শ্রমিক। রিয়াজুল ছিলেন তিনজনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
রুমা আক্তার বলেন, খুব অল্প বয়সে আমাগো বিয়া হইছিল। আমি নিজে হার্টের রোগী। একটা মাইয়া ধার দেনা কইরা বিয়া দিছি। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরও একটা মাইয়া অবিবাহিত আছে। আমার ওষুদ খরচ, মেয়ের পড়ার খরচ, সংসার খরচ চালাইতে যখন যে কাজ পাইতো তাই করতো। কখনো অলস বইসা থাকতো না।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, দেশের অবস্থা ভালা ছিল না। তোমারে কাজে যাইতে মানা করছিলাম। তুমি বলছিলা তোমার লগে কারো কোন শত্রুতা নাই। কেউ তোমার কোন ক্ষতি করবো না। জলদি কাজের থেইকা ফিরা আইবা। তুমিতো আর ফিরা আইলানা। আমরা কই যামু, কি করমু, কে আমাগো দেখবো!
ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে এখনো যেনো শোক কাটছে না রিয়াজুলের পরিবারে। প্রতিদিন তাদের বাড়িতে মানুষ আসছেন। রুমা ও তার মেয়েকে শান্তনা দিচ্ছেন। কোন স্বান্তনাই যেনো রিয়াজুলের স্ত্রী ও মেয়েকে শান্ত করতে পারছে না। বাবার স্মৃতি মনে করতেই কেঁদে উঠছিল খুকু আক্তার।
খুকুর সঙ্গে কথা হলে সে বলেন, আ.লীগের লোকজন বাবাকে আন্দোলনকারী ভেবে মাথায় ও পেটে গুলি করে। বাবাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা। পরে শুনি আমার বাবা মারা গেছে। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
সহযোগিতার ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনও আফিফা খাঁন বলেন, হতাহতদের সহযোগিতার ব্যাপারে এখনও সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি। সরকারের পক্ষ থেকে যদি তাদের জন্যে বরাদ্দ হয়, সেই বরাদ্দ পেলে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে।
টিএইচ