রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

গোমতীর চরে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

গোমতীর চরে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

সারা বছরব্যাপী কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি স্বনির্ভর দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছেন। বিগত প্রায় দু’দশক গোমতীর চরাঞ্চল প্লাবিত না হওয়ায় কৃষকরা নিরাপদেই চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করলেও চলতি বছরে অতিবৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে গোমতীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। 

তবে, পানি কমে গেলে চরের চাষিরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভারত থেকে আসা কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী জেলার কটকবাজার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দির সাপটা নামক স্থানে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। 

প্রতিবছর ওপার থেকে আসা নদীটি বর্ষাকালে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে বিপুল পরিমাণ পলি বহন করে উর্বর করে গোমতীর চরাঞ্চল। আর সেই উর্বর জমিতে চাষিরা ধান, গম, ভূট্টা, ইক্ষু, পাট, আলু, নানা জাতের শাক-সবজিসহ শীতকালীন বিভিন্ন তরিতরকারি উৎপন্ন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। দায়িত্বশীল সূত্র মতে সীমান্তের ওপারে ভারত নদীতে একাধিক বাঁধ দেয়ায় নদীটি বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানি কম থাকে। 

এতে বিগত বছরগুলোতে নদী তীরের কৃষকরা নিশ্চিন্ত মনে বারো মাসই বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপাদন করে আসছিল। চলতি বছরে আমাদের দেশ ও ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গোমতীর দু’কূল ছাপিয়ে যায় পানিতে। এতে চরের পুরো অংশ পানিতে তলিয়ে গেলে সর্বস্বান্ত হয় কৃষকরা। পরবর্তীতে চরের পানি নেমে গেলে আবারো ভাগ্য ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নদী তীরের কৃষকরা। 

এসময় কৃষকরা আগাম ও দ্রুত ফলনশীল সবজি উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ে। রোপণ করে লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, মূলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। সরেজমিন গোমতীর কুমিল্লা সদরের আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কাইচ্চাতলী বুড়িচংয়ের সমেষপুর, বাগিলারা, বাজেবাহেরচর, ভান্তি, পূর্বহুরা, বালিখাড়া, কামাড়খাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় কৃষকদেও ঘুরে দাঁড়াবার  দৃশ্য। নদীর দু’কূল ছাপিয়ে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যখন নতুন করে আবারো ভাগ্য ফেরাতে ব্যস্ত, তখন চরাঞ্চলের উল্লিখিত স্থানগুলোর কৃষকদের ভরসা নিজেরাই। 

আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, এলাকার চরের নান্টু নামের এক কৃষক জানান, সরকারি পর্যায়ে কেউই কোন খবর রাখেনি বা নিতে আসেনি। বন্যা পরবর্তীতে মাঠ চাষাবাদের উপযোগী করে গত প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি চরের প্রায় ১০ একরেরও বেশী জায়গাজুড়ে মুলা চাষ করেছেন। কিছু অংশে করেছেন লাল শাক ও ডাটা শাক। এরই মাঝে তার আবাদ করা মুলা ও লাল শাক বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, জমি তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে, কয়েক দিনের মধ্যেই আলু রোপণ করবো। 

তিনি বলেন, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, এলাকায় তিনিসহ তার পরিবারের অন্য সদস্য জাহাঙ্গীর, শাহআলম, রুবেল, হালিম, আব্দুল এ মৌসুমে প্রায় ২০ একরের বেশী জমিতে স্বজনসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। একই দৃশ্য উল্লিখিত বুড়িচং অংশের চরের। সেখানেও এমুহুর্তে কৃষকরা ব্যস্ত লালশাক, ডাটাশাক, মুলা চাষে। 

তবে, একাধিক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, সরকার কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করলেও আমাদের আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কাইচ্চাতলী এলাকার চরাঞ্চলের কয়েকশ একর জমি চাষাবাদ করা কৃষকদের জন্য কখনো কোন সরকারি প্রণোদনা বা সাহায্য করতে আসেনি, আমরা পাইনি। 

বন্যা পরবর্তী গোমতীর চরের কৃষকদের অবস্থা জানতে চাইলে, কুমিল্লা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বন্যায় গোমতীর চরের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এখানকার পরিশ্রমী কৃষকরা বন্যা পরবর্তী দ্রুততম সময়ে চরে শাক-সবজির আবাদ শুরু করে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন। তিনি  বলেন, গোমতীর চরের সবজি কুমিল্লার মানুষের চাহিদার বিরাট একটা অংশ পূরণ করে। 

টিএইচ