বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

গৌরব ও সাফল্যে শাবিপ্রবির ৩৪-এ পদার্পণ

সিলেট প্রতিনিধি 

গৌরব ও সাফল্যে শাবিপ্রবির ৩৪-এ পদার্পণ

পহেলা ফাল্গুন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) দিবস। ১৯৯১ সালের বসন্তের এই দিনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গৌরব ও সাফল্যের ৩৩টি ফাল্গুন পেরিয়ে ৩৪তম জন্মদিনে পা রাখলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশসেরা গ্রেজুয়েট তৈরিতে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তৈরি করেছে অনন্য অবস্থান।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সিলেটবাসীদের দীর্ঘ ৭০ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে ও সিলেটের কৃতী সন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনবদ্য অবদানে ১৯৮৫ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পর ১৯৮৬ সালের ২৫ আগস্ট সিলেট শহরের প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কুমারগাঁওয়ে ৩২০ একর জমির ওপর শাবিপ্রবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে অবস্থিত। 

এরপর ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গুটি গুটি পায়ে দীর্ঘ ৩৩ বসন্ত পেরিয়ে ৩৪-এ পদার্পন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগে প্রায় ৫শ এর অধিক শিক্ষক এবং প্রায় ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ও অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ এবং নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে  টানা দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে সুদক্ষ প্রশাসনিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া দীর্ঘ দু’দশক পর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটিই প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকার উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন ও সর্বশেষ তারবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত দুই হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল ‘টিম অলিক’। সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ‘দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

অবকাঠামগত দিক থেকে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছয়টি অ্যাকাডেমিক ভবন, তিনটি ছাত্রহল, তিনটি ছাত্রীহল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ৩টি ওয়ার্কশপ, মেডিকেল সেন্টার, শারীরিক শিক্ষা ভবন, জিমনেশিয়াম, কেন্দ্রীয় মিলনায়তন ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারসহ অসংখ্য ভবন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিহ্ন। স্বাধীনতার গৌরবের মতোই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
ক্যাম্পাসের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়িয়ে আছে একমাত্র ভাস্কর্য চেতনা ৭১। 

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, এখন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাবিপ্রবি অন্যতম মডেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের বাইরে। আমরা দক্ষ গ্রেজ্যুয়েট তৈরি করছি। যারা দেশ ও দেশের বাহিরে সুনাম অর্জন করে চলছে। 

প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রেখে চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। নানা বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে সুশাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মানবিকতার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি সাধন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

টিএইচ