শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীভাঙনে অর্ধশত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীভাঙনে অর্ধশত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির তেমন কোনো প্রভাব না থাকলেও, দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বেড়েছে। কারো কাছে বৃষ্টি আনন্দের হলেও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদী তীরে বসবাস করা শতশত পরিবারের কাছে নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুম মানেই আতঙ্ক। 

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটায় ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার নাপিতপাড়া, হিন্দুপাড়া ও বড়গলি গ্রামের শতাধিক পরিবার। 

বিগত বছরগুলোতে এই তিনটি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। প্রতিবছর বর্ষাকালে জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে ধরণা দিয়েও কোন সুফল পায়নি ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। তাদের দেয়া আশ্বাসের অপেক্ষায় থেকে নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে বাপ-দাদার ভিটেমাটি।

করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছরও নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পথে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার। দিন এনে দিন খাওয়া নিম্ন আয়ের এসব অসহায় পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে বুট-বাদাম বিক্রি করে সংসার চালায়। মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু হারালে পথে বসতে হবে তাদের। গতবছর গ্রাম তিনটি পরিদর্শ করেন দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক। নদীভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই আশ্বাসও বাস্তবায়নে রূপ নেয়নি।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামগুলোর ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ভাঙনে নদীর পানি বাড়ির ঘরের ধার দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামে ৭-৮টি বাড়ির একাধিক ঘরের অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙে নদীতে হারিয়ে গেছে। 

বাড়িগুলোর অবশিষ্ট ঘরে গরু ছাগল নিয়ে কোনমতে দিন কাটাচ্ছে অসহায় পরিবারগুলো। ভূক্তভোগী এসব পরিবারের অধিকাংশই সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং কিছু আছে মুসলিম পরিবার। ঘর হারানো বৃদ্ধা মালতি রানী বলেন, আমার আর কিছু নেই। ভাঙা ঘরে বৃষ্টিতে জল পড়তো। সেই জল পড়া ঘরও নদীতে হারিয়ে গছে। কোথায় থাকবো! কি করবো! কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। গরিবেও কষ্ট কেও দেখে না।

নিতাই সাহা বলেন, প্রতিবছর এমপিকে জানাই। মেয়রের কাছে যাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দেই। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য। সবাই শুধু আশা দিয়ে যায়। হবে হচ্ছে আরো কত কি। গতবছর এমপি এসে আমাদের অবস্থা দেখে গেছে। ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে তিনি যাওয়ার পর আমাদের শুধু চাল আর ডাল দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ঘোড়াঘাট পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, দুদিন আগেও ভূক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি এমপিকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। নদী শাসনের মাধ্যমে নদীভাঙন ঠেকাতে না পারলে পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমি আবারও আমাদের এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমি এই জেলায় নতুন। পৌর মেয়রের কাছে থেকে বিষয়টি জেনেছি। আমি গ্রামগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানাবো। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।

টিএইচ