কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে প্রসূতি অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন হাওরবেষ্টিত এ উপজেলার প্রসূতিরা কম খরচে সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে লাখ লাখ টাকার সরকারি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসে আবেদনবিদ ডা. মোজাম্মেল হোসেন এবং স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রসূতি শল্যচিকিৎসক ডা. সেলিনা হক দুইজনই বদলি হয়ে যান। এরপর থেকেই পদ দুটি শূন্য রয়েছে। আর তখন থেকেই সেখানে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওটি কক্ষটি তালা দেয়া। এ সময় কথা হয় উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের ইয়াকুব মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, গত ৪ মে আমার স্ত্রীকে সিজারের জন্য নিকলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় সিজার করাতে পারিনি। পরে কিশোরগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল গিয়ে প্রায় ২০ হাজার খরচ করে সিজার করায়।
এতে আমার টাকা ও সময় দুইটায় অপচয় হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, প্রসূতিসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ উপজেলা থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয় শুধু সিজারের জন্য।
নিকলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, জরুরি প্রসূতি সেবা ও অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারতেন। জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকা অপচয় হচ্ছে না, অনেক সময় প্রসূতিদের জরুরি সেবার অভাবে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুছাম্মৎ শাকিলা পারভিন জানান, ১৫ বছর ধরে নিকলীতে ডাক্তারের অভাবে প্রসূতি অস্ত্রোপচার হয় না, এটা দুঃখজনক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাব।
উপজেলা আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সোহাগ মিয়া বলেন, শূন্য পদের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কয়েকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ দুই পদে চিকিৎসক পদায়ন হলে ও যন্ত্রপাতি সচল হলেই অস্ত্রোপচার শুরু হবে।
কিশোরগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন তারেক আনাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও সিভিল সার্জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছি, দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
টিএইচ