শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পুরো উপজেলার নিচু এলাকার লোকজন। পৌরশহরের লোকজনও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত দুই দিনে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ সড়কের পর  জগন্নাথপুর পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের আংশিক পানিতে তলিয়ে গেছে। 

পৌরশহরের হবিবনগর এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। তারা খুব কঠিন সময় পাড় করছেন।

জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পুরো উপজেলায় ১৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। কিন্তু বন্যার্ত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সহযোগিতা দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ফেয়ারফেইস জগন্নাথপুর নামের একটি সামাজিক সংগঠন কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করে ও একজন  হোটেল ব্যবসায়ী আখনি পরিবেশন করেন। 

এদিকে, বন্যার্তদের মাঝে মেডিকেল টিম শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ওষুধ সরবরাহ করে। এগুলোর বাইরে তারা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাই জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ  বন্যাকবলিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। বিশেষ করে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন, হলদিপুর-চিলাউড়া ইউনিয়ন ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের  জনসাধারণ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও জগন্নাথপুর পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের হবিবনগর নামক স্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই সড়কের অংশ শিবগঞ্জ-বেগমপুরে যাওয়ার যোগাযোগ মাধ্যম আরএইচডি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে ঘোষগাঁও সড়কও পানির নিচে। তলিয়ে যাওয়া এই সড়কে একটি বিশাল গাছ পড়ে আরো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। 

এছাড়া জগন্নাথপুর পৌরশহরের ৫নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ স্থান পালিতে তলিয়ে গেছে। ৬নং ওয়ার্ডের একটি অংশ পানিতে নিমজ্জিত। এছাড়া, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সরকারি দপ্তর, জগন্নাথপুর-সিলেট বাসস্ট্যান্ড, জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জগন্নাথপুর মৎস্য আড়ত ও মাছের বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। 

বন্যার্তরা জানান, পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকের উপার্জন বন্ধ। এমতাবস্থায় তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তারা জানান, বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি-বেসরকারিভাবে তেমন কোনো ত্রাণ পাননি। 

হবিব নগরের ওয়ারিশ আলীর কলনীর বাসিন্দা আলমগীর মিয়া বলেন, গত ৪ দিন ঘরে পানি উঠে। ঠিকটাকমতো কাজে যেতে পারছি না। তাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। তিনি বলেন সরকার ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে উপকৃত হতাম।

এই কলোনীর বাসিন্দা হামিদা বেগম জানান, বন্যার কারণে আমি খুব কষ্টে তিন সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কিচ্ছু পাইনি।
ব্যাটারি চালিত অটোচালক শাহীন মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম জানান, ঘরে পানি থাকার কারণে হাড়ি-পাতিল খালি। তাই বাজার থেকে কিনে এনে চিড়া খাচ্ছি। কেউ কিছু দেয়নি।
জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের রহমান মিয়ার ঘরে পানি থাকার কারণে ২ দিন আগে পরিবার নিয়ে আব্দুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে তারা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি। 

জুয়েল মিয়া জগন্নাথপুর পৌরভবনের পেছনের কলোনী থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। তিনি জানান, গত বুধবার  ডাক্তার প্যারাসিটাল দিয়ে যায়। একটি সামাজিক সংগঠন ও রেস্টুরেন্টের মালিক আমাদের জন্য আখনি পাঠায়। এর বাইরে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কারো সহযোগিতা নেই। 

ঘোষগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ  আব্দুল মালিকের ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এবারের অকাল বন্যায় তার ঘরের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়, হাঁস-মুরগি পানির স্রোতে ভেসে যায়। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ও গরু-বাছুর নিয়ে ঘোষগাঁও ব্রিজে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু সাংবাদিক ছাড়া কেউ আমাদের খবর নিতে আসে না। শুধু তারা নন, বন্যাকবলিত আরো অনেকের আর্তি শোনা যায়।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খানম সাথী বলেন, বন্যাকবলিত লোকজনকে সহযোগিতা করতে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে তিনি আহ্বান জানান জগন্নাথপুর ইউএনও আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বৃহস্পতিবার ২৭ টন ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে আমরা  আরো সাড়ে ৯ টন ত্রাণ বিতরণ করি। তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।

টিএইচ