শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

জনবল সংকটে লালমনিরহাট হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত! 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

জনবল সংকটে লালমনিরহাট হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত! 

উত্তরের সীমান্তবর্তী অবহেলিত একটি জেলার নাম লালমনিরহাট। এ জেলার মানুষজন অত্যন্ত সহজ-সরল। এই অবহেলিত জেলায় বসবাসকারী মানুষজন বেশির ভাগই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। ৫টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা, ৪৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ জেলা। প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস।

এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটি পর্যায়ক্রমে ১০০ শয্যা, এরপর সর্বশেষ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট উন্নীতকরণ করা হয়। ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ করা হলেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবার মান। শয্যা সংকটের কারণে ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি ও মেঝোতে থাকতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

সাধারণ অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেই ডা. রেফার্ড করেন রংপুর অথবা কোনো ক্লিনিকে। যে ক্লিনিকে সময় দেন হাসপাতালের ওই সব ডা. ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সরকার দেয়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও এবং সপ্তাহে ৭ দিন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কথা হলেও মানছেন না সে নিয়ম ডাক্তাররা।

সপ্তাহে ২-৩ দিন ২ ঘণ্টার জন্য নামমাত্র স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলে যান বিভিন্ন ক্লিনিকে। কথায় কথায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রেফার্ড করা হয় ক্লিনিক বা রংপুর হাসপাতালে। জানা গেছে, ২৫০ শয্যার অবকাঠামো তৈরি হলেও ১০০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে চলছে সদর হাসপাতালটি।

১০০ শয্যার জন্য অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৪১ জন। তার বিপরীতে হাসপাতালে কর্মরত আছে ২২ জন এবং শূন্য আছে ১৯টি পদ। এ ছাড়াও নার্সদের মঞ্জুরিকৃত পদ আছে ৭৩টি। তার বিপরীতে কর্মরত আছে ৬৫ জন। শূন্য আছে ৮টি পদ। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিও) মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) ফার্মাসিস্ট, টিকিট ক্লার্ক, ওয়ার্ড মাস্টার, ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্ট, বাবুর্চি, ডোম, অফিস সহায়ক, স্টেচার বেয়ারার, সুইপার এবং ওয়ার্ড বয়সহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোর বেশির-ভাগই আছে শূন্য।

অদক্ষ জনবল জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতাল, হচ্ছে না কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হাসপাতালের দামি দামি এক্সে মেশিনগুলো। ফলে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার মানুষজন।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন দীঘলটারী গ্রামের মিঠু মিয়া (২৮) বলেন, আমার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম সন্তান প্রসবের ব্যথা অনুভব হলে সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করি। কিন্তু ওই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার রায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা দায়িত্বে থাকলেও রোগীকে দেখতে আসেননি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ক্লিনিকে নিলে বাচ্চা প্রসব করেন।

নার্সদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রমজান আলীকে ওই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের ক্লিনিক মুখী করছেন ডাক্তাররা এই বিষয়টি আমার জানা নেই।

ডাক্তাররা সপ্তাহে কয়দিন দায়িত্ব পালন করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সপ্তাহে ৬-৭ দিনই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নিয়ম। কিন্তু ৬-৭ দিনের পরিবর্তে সপ্তাহে ২-৩ দিন স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ডাক্তাররা এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে জনবল কম থাকায় একটু হেরফের হচ্ছে। 

টিএইচ