টাঙ্গাইল এলজিইডিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোলার মেশিন (রাস্তা সমান করার যন্ত্র) ভাড়া দিয়ে এবছরও দেশের জেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় করেছে এবং একই অর্থবছরে ল্যাবরেটরি টেস্ট খাতেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর সঠিক নির্দেশনা ও সম্মিলিত কার্য পরিচালনা (গ্রুপ ওয়ার্ক) করায় এ রেকর্ড সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্ত (এলজিইডি) গৃহীত ১৭টি প্রকল্পে ৬৪৬ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে রোলার মেশিন ভাড়ায় এবছর রাজস্ব আয় হয়েছে চার কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৬০ টাকা। গত বছর একই খাতে ২৬৮ কোটি ৮ লাখ পাঁচ হাজার ৯০৬ টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছিল দুই কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৫৩ টাকা। এ বছর রাজস্ব আয় বেড়েছে দুই কোটি চার লাখ ৭৪ হাজার সাত টাকা অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ৯৪% বেশি।
এ অর্থবছরে একই পরিমাণ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি খাতে ৬ কোটি ৮৩ লাখ পাঁচ হাজার ৭৮০ টাকা রাজস্ব আদায় করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে- যা গত বছরের তুলনায় ৩০% বেশি। এ খাতে গতবছর রাজস্ব আয় হয়েছিল পাঁচ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ৭১৬ টাকা।
টাঙ্গাইল এলজিইডির সূত্রমতে, গ্রামীণ সড়ক মেরামত প্রকল্পে ৫৭ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার ২৩৩ টাকা। ঢাকা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়নে সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ৪১ লাখ ৩২ হাজার ১৯০ টাকা।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ব্যয় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পে দুই কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭৬ টাকা। ময়মনসিংহ অঞ্চলে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৯ টাকা।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকার বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ৬১ লাখ ৭৩৯ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (জেলা-টাঙ্গাইল) প্রকল্পে ২৫২ কোটি ২২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে দুই কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৪২৬ টাকা। গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে এক কোটি তিন লাখ ৭২ হাজার ৬৭৫ টাকা।
পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে ১৮ কোটি ১২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩০০ টাকা। উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ টাকা।
প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং ফর রুরাল ব্রিজেজ শীর্ষক প্রকল্পে ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৫০৪ টাকা। দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ৩২ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে তিন লাখ ১২ হাজার ২৮২ টাকা।
সারা দেশে পুকুর খাল উন্নয়ন প্রকল্পে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৮০০ টাকা। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পে এক কোটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার ৯৫৬ টাকা। উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।
সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ খাতে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৮০ টাকা। বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট প্রকল্পে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টরপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) খাতে এক কোটি তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা।
এলজিইডির যান্ত্রিক বিভাগের সূত্রমতে, তারা রোলার মেশিন ভাড়া দিয়ে গত অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৪% বেশি রাজস্ব আয় করেছে। এলজিইডি গৃহীত ১৭টি প্রকল্পের ব্যয়িত অর্থের বিপরীতে জুলাই মাসে ২৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬৯ টাকা, আগস্ট মাসে ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৬৬৩ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৪ টাকা, অক্টোবর মাসে ৪৫ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬২ টাকা, নভেম্বর মাসে ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৬৬ টাকা, জানুয়ারি মাসে ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৬০১ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯১ টাকা, মার্চ মাসে ৫১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৪ টাকা, এপ্রিল মাসে ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৬ টাকা, মে মাসে ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং জুন মাসে ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৮ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইল এলজিইডির ফোরম্যান অত্যন্ত দক্ষ একজন মানুষ। রোলার মেশিন সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা তিনি সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করেন। রোলার মেশিন ভাড়ার বিষয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ছাড় না দিলেও চাওয়ামাত্র সাইটে রোলার পাঠিয়ে কাজের গতি তরান্বিত করতে সহায়তা করেন।
টাঙ্গাইল এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. বিপ্লব হোসেন জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তারা ২৯টি রোলার মেশিন (রাস্তা সমান করার যন্ত্র) ভাড়া দিয়ে চার কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করে সারা দেশের জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। গত অর্থবছরেও তারা সব জেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় করেছিল। ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায়েও তারা এবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। টাঙ্গাইল এলজিইডি এবার ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায় করেছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ পাঁচ হাজার ৭৮০ টাকা।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌীশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোলার মেশিন ভাড়া এবং ল্যাবরেটরি টেস্ট ফি আদায়ে টাঙ্গাইল এলজিইডি নজির সৃষ্টি করেছে। সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে দিনের কাজ দিনে করার নীতি গ্রহণ করায় এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
টিএইচ