নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়া রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন ৫ মরদেহ মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। জনমনের প্রশ্ন এতগুলো মানুষের একসাথে মৃত্যুর আড়ালে নাকি লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর কোন ঘটনা। গত সোমবারে ভোর সকালে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় দুই কিলোমিটার অদূরে পলাশতলী ইউনিয়নের নির্জন খাকচর কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই পুলিশ, সিআইডি, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ।
নিহত সবাই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সব মরদেহ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেললাইনের পাশে ছিন্নভিন্ন ৫টি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। রেল পুলিশ, পিবিআই পুলিশ, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল এসে নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন।
অন্যদিকে দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে মেথিকান্দার রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই অপর একজন মারা যান।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকালে রেললাইনের পাশে লোকজনের ভিড় দেখে এগিয়ে আসি। এসে দেখি রেললাইনে মানুষের শরীরের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ ও রক্ত দেখতে পাই। একটু সামনে এগোতেই একটি মরদেহ দেখা যায়। পরে আরও একটু সামনে গেলে পাশাপাশি আরও ৪টি লাশ দেখা যায়।
তিনি বলেন, এটি পারাপারের জন্য কোনো রাস্তা নয়। তাই এই মৃত্যুগুলো রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
এলাকাবাসী আমিনুল ইসলাম বলেন, ৫ জন লোক মারা গেছে শুনে এখানে দেখতে এসেছি। যে জায়গাটিতে মারা গেছে। এটি চলাচলের রাস্তা নয়। এমনকি তারা এলাকার লোকও নয়। তারা কিভাবে এখানে এসেছেন একমাত্র আল্লাহই বলতে পারবেন।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরীরগুলো একত্র করেছি। এরপরই পরিচয় শনাক্তের জন্য নরসিংদীর পিবিআই সদস্যদের খবর জানিয়েছি। বেলা সাড়ে ১১টায় তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে পিবিআই। তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ঠিক কিভাবে এই পাঁচজন ট্রেনে কাটা পরে মারা গেছেন তা তদন্ত করে এর কারণ অনুসন্ধান চলছে।
এদিকে, গত সোমবার রাতে ময়নাতদন্তের শেষে নরসিংদী রেলওয়ে কবরস্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত পাঁচজনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন সম্পন্ন করে রেলওয়ে পুলিশ।
নিহতরা ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়েছে নাকি রেললাইনে বসা অবস্থায় কাটা পড়েছে অথবা অন্য কেউ মেরে মরদেহ রেললাইনে ফেলে রাখার পর মরদেহ কাটা পড়েছে -এসব নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। সবগুলো মরদেহ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যেরও সৃষ্টি হয়েছে।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ জানান, আমরা মরদেহগুলোর ডিএনএ ও ভিসেরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো ঢাকার মালিবাগের সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ডিএনএ পরিচয় শনাক্তে ও ভিসেরা মাধ্যমে তারা কোন নেশা করেছিলো কিনা জানা যাবে। এ ঘটনাটি খুবই গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।
নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, হাতের ছাপ সংগ্রহ করলেও কারোই পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এত গুলো মানুষের একসাথে মৃত্যু নিয়ে রহস্য মনে হচ্ছে । আমরা সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছি তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সামসুল আরেফীন, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন ও ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল আলীম।
টিএইচ