কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের সেকান্দরনগর বাজারে নতুন নৌকা তৈরি, পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ করছে স্থানীয় কারিগররা। স্থানীয়ভাবে এগুলোকে কোষা নৌকা হিসেবেই জানেন সবাই।
বর্ষা মৌসুমে চারদিক যখন পানিতে থই থই করে তখন কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষসহ আশপাশ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বর্ষায় চলাচলের জন্য কারিগররা তৈরি করছেন বিভিন্ন সাইজের কোষা নৌকা।
বর্ষাকে মোকাবেলা ও প্রস্তুতি নিতে এসব অঞ্চলে ছোট-বড় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকাগুলো মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
এ মৌসুমে নৌকা কারিগরদের ব্যস্ততার শেষ নেই। তবে সারাবছর নৌকা তৈরির কাজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন নৌকা তৈরির কারিগররা। শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কারিগররা ছোট-বড় নানান রকম নৌকা বানাচ্ছে। কেউ কাঠ কাটছে, কেউ মাপজোক আবার কেউবা হাতুড়ি দিয়ে তারকাটা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের ফাঁকে কথা হয় সেকান্দরনগর গ্রামের বাসিন্দা নৌকা তৈরির কারিগর শাহরিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে নৌকা তৈরির কাজ করছি। বড় নৌকার চেয়ে ছোট নৌকার চাহিদা অনেক বেশি। একটি ১৪ হাতের ডিঙি নৌকা তৈরি করতে দুজন মিস্ত্রির ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এ নৌকাটি বিক্রি করা যায় ৪ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে শিমুল, কাঁঠাল, চাম্বল, রঙিন, আম, গাব ও কদমসহ বিভিন্ন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব নৌকা। কাঠের ধরনের সঙ্গে নৌকার দামের তারতম্য হয়।
তবে সবচেয়ে ভালো মানের নৌকা তৈরি হয় রঙিন কাঠ দিয়ে। দামও একটু বেশি। রঙিন কাঠের ১১ হাত একটি কোষা নৌকা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। টেকেও বেশিদিন। রঙিন কাঠের একটি নৌকা একাধারে পাঁচ বছর ব্যবহার করা যায়। অন্য কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা দুই থেকে তিন বছর ব্যবহারের উপযোগী থাকে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলার শুধুমাত্র সেকান্দরনগর বাজারেই তৈরি হয় এসব নৌকা। বর্ষা মৌসুমে হাওড় এলাকার মানুষের হাতে কোনও কাজ না থাকায় এসব নৌকা নিয়ে মাছ শিকার, পশুখাদ্য ও একপাড়া থেকে অন্য পাড়াতে যাতায়াতে ব্যবহূত হয়। তবে রাতে টর্চের আলোতে মাছ শিকার করার জন্য প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহূত হয়।
নৌকা তৈরির অন্য কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আগে প্রতিদিন এই বাজারের প্রায় ২০টি দোকানে মোট ২শ নৌকা বিক্রি হতো। এবছর বৃষ্টি কম থাকায় নদীনালায় পানি দেরিতে আসায় নৌকা বিক্রি খুব কম হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ টি নৌকা বিক্রি হয়। এজন্য আমাদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে। প্রতিটি নৌকা তৈরি করে ৮শ টাকা মজুরি পাই। একটা নৌকা তৈরিতে কমপক্ষে দুইজন কারিগর দরকার। ভালো বিক্রি হলে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টা নৌকা তৈরি করা যায়।
উপজেলার কালনা গ্রামের মুজিবুর রহমান জানান, নীচু এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেলে চলাচলের একমাত্র উপায় এসব কোষা নৌকা। বর্ষাকালে প্রতি মুহূর্তে নৌকার প্রয়োজন হয়। হাটে বাজারে, ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম বা অন্য পাড়ায় যেতে এসব নৌকা খুব দরকারি।
টিএইচ