ধীরে ধীরে ধসে পড়ে নিশ্চিহ্নের পথে ২০০ বছর পুরোনো পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন ও অমূল্য প্রত্নসম্পদ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কুমিল্লার তিতাসের মজিদপুর জমিদার বাড়ি।
সংস্কারের অভাবে, অযত্ন আর অবহেলায় জীর্ণশীর্ণ জঙ্গলাবৃত হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব ভবন দেখতে ভিড় করত দর্শনার্থীরা। ভবনগুলো সংরক্ষণ বা অপসারণ করা না হলে যেকোনো সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান আশপাশের বসবাসকারীরা।
একসময় জৌলুস আর ঠাটবাট থাকলেও জমিদার বাড়িটি এখন বিরান পড়ে আছে, চারদিকে থমথমে ভুতুড়ে পরিবেশ। ভবনগুলোর দেয়ালে জন্মেছে পরগাছা। নোনা ধরা ইটের দেয়াল খসে খসে পড়ছে। দেয়াল দেয়ালে তৈরি হয়েছে বড় ফাটল। যে কোনো সময় ধসে পড়ে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এটি।
বাড়ির নির্মাণশৈলী এখনো নজর কাড়ে। ভাঙাচুরা অবস্থায় বাড়িটি এখন কোনো রকমে টিকে আছে আর ধ্বংসের প্রহর গুনছে। বাড়ির বিভিন্ন কামড়ায় লাকড়ির স্তূপ করে রেখেছেন স্থানীয়রা। গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি দ্বিতল ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে যায়।
এ সময় পাকঘরে রন্ধনে ব্যস্ত ছিলেন এক গৃহিণী অল্পের জন্য তিনি বেচে যান। তিনি বলেন আল্লায়ই আমারে বাঁচাইছেন মাত্র ১ মিটার ভেতরে ভবনটি যদি আছড়ে পড়ত তহলে আমি স্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যেতাম। ভাগ্য ভালো তাছাড়া বাচ্চার সে সময় ওই যায়গায় খেলাধুলা করতে যায়নি। নতুবা কি-যে হতো? জানা যায়, ১৮০০ শতকের দিকে শ্রী রামলোচন রায় বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিতাস, হোমনা, মেঘনা ও মুরাদনগর এলাকা ছিল তার জমিদারির আওতাধীন। এই বাড়িতে মোট ১৭টি ভবন ছিল।
এখন মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলো ধস ও দখলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ১টি দিঘি ও ২০টি পুকুর খনন করা হয়েছিল। সেগুলো এখন নামেমাত্র আছে। ইতিহাসে এই বংশের কয়েকজন জমিদারের নাম পাওয়া যায়।
তারা হলেন শ্রী কালীচরণ রায়, ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, শিবচরণ রায়, পিয়ারী মোহন রায়, বিহারী মোহন রায়, শশী মোহন রায়, শরৎচন্দ্র রায়, মোহিনী মোহন রায়, ক্ষিতিষ চন্দ্র রায়, গিরিশ চন্দ্র রায়, শিরিশ চন্দ্র রায়, হরলাল রায়, যোগেশ চন্দ্র রায়, শ্রী নারায়ণ চন্দ্র রায়, শ্রী দুর্গাচরণ রায়, ক্ষেত্র মোহন রায়, কুঞ্জ মোহন রায় ও উপেন্দ্র চন্দ্র রায়। তাদের মধ্যে, ক্ষেত্র মোহন রায় তিতাস উপজেলার প্রথম এন্ট্রাস পাস, প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং আইনজীবী। উপেন্দ্র চন্দ্র রায় তিতাস উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার। রামলোচন রায়ের মতো আরো দুজন নামকরা জমিদার হলেন রাম সুন্দর রায় ও রামগতি রায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর-রহমান জানান, জমিদার বাড়িটি সংস্কারের ব্যাপারে আমরা প্রত্নতত্ত্ব দপ্তারে চিঠি দিয়েছিলাম এতে আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তাই এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি।
টিএইচ