বড়াল ছিল খরস্রোতা এক নদীর নাম। এখন আর নাব্য নেই। যৌবন হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন বড়ালের বুকে চাষ হচ্ছে গমসহ বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়ে গেছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় চেপে গেছে। ফলে খরস্রোতা বড়াল নদী আজ শুধুই স্মৃতি।
স্থানীয়রা জানান, প্রমত্তা পদ্মা নদীর শাখা হিসেবে বড়াল নদীর উৎপত্তি হয়ে রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ি হয়ে হুড়া সাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় পড়েছে। একসময় যোগাযোগের সুবিধার কারণে বড়াল নদীর দুই পাড়ে চারঘাট বাজার, চারঘাট উপজেলা পরিষদ, চারঘাট মডেল থানা, চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চারঘাট এমএ হাদী কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, আড়ানী বাজার, রুস্তমপুর পশুহাট, পাকা বাজার, জামনগর বাজার, বাঁশবাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বড়ালে পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে বড়াল নদীকে ঘিরে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ‘নাটোরের নারদ ও মুসা খান (আংশিক) নদী ও রাজশাহীর চারঘাটের রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন’ নামে ১৩ কোটি তিন লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদী খনন ও প্রবেশমুখে খনন করতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাট বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ শেষ হয়। ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ হলেও বর্ষায় বড়ালে পানি আসেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়সারা কাজ করার কারণে নদী থেকে খনন করা বালু আবার নদীতেই চলে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।
স্কুলশিক্ষক জাকারিয়া হোসেন জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে এ নদীটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদী একদিন হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় জেলেরা জানান,এক সময় এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয় না। পানি না থাকায় জেলেরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পদ্মার মুখে পলি মাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়াল আজ নিজের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদীটি পুনঃখনন করে অবাধ পানিপ্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, ইতোমধ্যে পদ্মার শাখা বড়ালের মুখে খননকাজ করে নাব্য ফিরিয়ে আনতে পানি পুনরুদ্ধার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত এর বাস্তবায়ন করা হবে।
টিএইচ
