গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুটি গাইবান্ধাকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করছে। এটি তিস্তার দক্ষিণ অংশে সুন্দরগঞ্জের হরিপুর এলাকায় নির্মিত হচ্ছে।
সেতুটির দৈঘ্য ১ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয় নি। এটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। চিলমারীর সঙ্গে কমবে বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্বও।
চিলমারী থেকে সুন্দরগঞ্জ হয়ে গাইবান্ধার দূরুত্ব মাত্র ২৫-৩০ কিলোমিটার। অথচ চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদরের মানুষকে একমাত্র তিস্তা নদীর কারণে লালমনিরহাট জেলায় নির্মিত তিস্তা সেতুর ওপর দিয়ে রংপুর হয়ে গাইবান্ধায় ঢুকতে হতো।
এখন এই সেতু চালু হলে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে পৌঁছা যাবে। তাতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রায় দুই ঘণ্টা সাশ্রয় হবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া চিলমারী, সুন্দরগঞ্জ এলাকার মানুষের রুটি-রুজির পথ প্রশস্ত হবে। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করতে পারবেন। ফলে জীবন-জীবিকারও উন্নতি ঘটবে।
সমপ্রতি হরিপুরে গিয়ে দেখা যায়, চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুর ৩০টি পিলারের মধ্যে সবগুলোই বসেছে। স্প্যানসহ পুরো অবকাঠামোই দৃশ্যমান।
সরজমিনে আরও দেখা যায়, দর্শনার্থীদের কেউ চরের ফসলি আবাদের ছবি তুলছেন। কেউবা সেতুর সঙ্গে স্মৃতি ধারণ করছেন। কেউ সেতুর পাশে দোকানে চা ফুঁকছেন।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়ামে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এ সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ভূমি অধিগ্রহণ, মূল সেতু ও সংযোগসড়ক নির্মাণ, সমপ্রসারণ এবং নদী শাসনসহ বিভিন্ন খরচ বাবদ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা।
সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৬ কিলোমিটার গাইবান্ধা অংশে। বাকিটা কুড়িগ্রাম অংশে। এছাড়া দুই তীরে স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার। যা নদীভাঙন রোধে বিশেষ অবদান রাখবে।
শুধু তাই নয়, সড়কগুলোতে নতুন করে ৫৮টি বক্স কালভার্ট এবং ৯টি আরসিসি সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি, ৪৮ মিটার দীর্ঘ দুটি, ২০ মিটার দীর্ঘ দুটি, ১৬ মিটার দীর্ঘ একটি এবং ১২ মিটার দীর্ঘ তিনটি সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে।
গাইবান্ধা জেলা (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলাম জানান, চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। তবে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হলেই চালু হবে স্বপ্নের তিস্তা সেতু।
টিএইচ