সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

দোয়ারাবাজারে লিচুর ফলনে হতাশ চাষিরা

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

দোয়ারাবাজারে লিচুর ফলনে হতাশ চাষিরা

সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজারে মৌসুমি ফল লিচুর ফলনে হতাশ চাষিরা। খরা ও অতিরিক্ত দাবদাহে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাননি চাষিরা। মৌসুমের এই সময়ে বাজারগুলোতে লিচুতে পরিপূর্ণ থাকার কথা থাকলেও এবার তা হয়নি। ফলে কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

জানা যায়, ছাতক-দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ২০-২৫ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করা হয়। ওই এলাকার লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে খুব কম বিক্রির জন্য পাঠানো হলেও দেশীয় প্রজাতির এই লিচু সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা ব্যাপক। 

মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ছাতক-দোয়ারাবাজারসহ স্থানীয় হাট-বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে এ অঞ্চলের উৎপাদিত ১০০ লিচু ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর, রাজারগাঁও, বড়গল্লা এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া টেংরাটিলা ও পাইকপাড়া গ্রামে রয়েছে লিচুর বাগান।

ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগোলেই দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া গ্রাম। মানিকপুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। লিচু চাষি আবু তাহের জানান, চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে লিচু ধরা শুরু হয়। একটি বড় গাছের লিচু বিক্রি করে বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। 

মানিকপুরের সঙ্গে ছাতক-দোয়ারাবাজারের সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত নাজুক। ফলে চাষিরা এ অঞ্চলে তাদের উৎপাদিত লিচু সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এখানের উৎপাদিত লিচু কম খরছে বাজারে পাঠাতে পারছেন না।

লিচু চাষি ফরহাদ মিয়া বলেন, গত বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু প্রলয়ংকারী বন্যায় তা আর বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আশা ছিল এ বছর লিচু বিক্রি করে গত বছরের লোকসান পোষাব। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত খরার কারণে অন্যান্য বছরের মতো লিচুর ফলন হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকের কম লিচুর ফলন হয়েছে। অনেক গাছে লিচু একদমই আসেনি। আর যা ফলন হয়েছে আকারে ছোট।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে যদি লিচু চাষিদের নিয়ে প্রতি বছর লিচু চাষের ওপর পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনামূলক সভার আয়োজন করা যায় তাহলে কৃষকরা অনেক কিছু জানতে পারবেন ও লিচু চাষে তাদের আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরো জানান, সুনামগঞ্জের বৃহত্তম লিচুর বাগান মানিকপুর, এই গ্রামটি টিলাবেষ্টিত হওয়ায় লিচু বাগানগুলোতে একটি পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষজন এখানে আসবে ও মানিকপুর গ্রাম একটি বাণিজ্যিক ও পর্যটনশিল্পে পরিণত হবে। এতে এলাকার অর্থনীতির গতি সামনের দিকে নিয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক বছর মে মাসের শুরু থেকে গাছে গাছে পাকা লিচুর সমারোহ হয়ে থাকে। সারা বছর পরিচর্যা করার পর ঠিক এই সময়টিতে লিচু কিনতে আসেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় ছাতক-দোয়ারাবাজারে বেড়েছে লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই এলাকার লিচু এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তবে এবার খরা আর তীব্র দাবদাহে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম লিচু ফলন হয়েছে।

ছাতক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা মহসিন আলী জানান, লিচু চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। লিচুর ফলন ভালো রাখার জন্য সরকার থেকে অনেকে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। 

চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হলেও চাষিরা ভালো বাজার মূল্য পাচ্ছেন। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সব সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

টিএইচ