কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বছর একজন শিক্ষার্থীও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি এমন নজিরবিহীন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিস্ময় ও ক্ষোভ। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে জর্জরিত।
চলতি বছর ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও কেউই পরীক্ষায় বসেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী। তিনি বলেন, আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের বোঝাতে, কিন্তু কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে এই ১৫ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কোন সন্ধান মেলেনি বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশের হালও হতাশাজনক।
জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে, বেঞ্চ ভাঙা, দরজা-জানালাও প্রায় অপ্রচলিত। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, পাঠদানও অনেকটাই গরহাজির। দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, বৃষ্টি হলে ক্লাস হয় না, বেঞ্চ ভাঙা, পড়তে ভালো লাগে না। অনেক সময় শিক্ষকই আসে না।
এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ দাবি করলেও প্রকৃত সংখ্যা শতাধিক নয়। অথচ শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। এদের অনেকেই নিয়মিত নন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, সন্তানদের স্কুলে পাঠাই একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়।
কিন্তু স্কুলের পরিবেশই যদি না থাকে, তাহলে পড়বে কীভাবে? এতদিন ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলেও, এবার সেই কেন্দ্রে তাদের কেউ উপস্থিত ছিল না।
বিষয়টি জানিয়েছেন কেন্দ্রসচিব ও বাগোয়ান কেসিভিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম টম।
বিদ্যালয়টিতে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী জানান, এবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫ জন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছিল।
তবে দুঃখজনকভাবে তারা কেউই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য, কিন্তু তাতে সফল হইনি। ঘটনাটি দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নজর এড়ায়নি। একাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইউএনও মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিএইচ