বগুড়ার ধুনটে গবাদি পশুর লাম্পি রোগে দিশেহারা হয়ে পড়ছে অনেকে। খুব অল্প সময়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা জুড়ে। ভাইরাসজনিত এ রোগের কারণে প্রতিদিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ভিড় করছে পশু পালনকারীরা।
এ রোগ মশা ও মাছির আক্রমণসহ বিভিন্নভাবে অন্য গরুর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মশা ও মাছিকে এ ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে দায়ী করা হয়। অন্য কীট-পতঙ্গের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গরুর লালা গরুর খাবারের মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভির দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে। গ্রাম-গঞ্জের প্রাণি চিকিৎসকরা এক সিরিঞ্জ ব্যবহার করে বিভিন্ন গরু-ছাগলকে টিকা দেয়। এতেও সিরিঞ্জের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসে আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন প্রজননে ব্যবহার করলেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
আবু মুসা নামের এক গরু পালনকারী জানান, মাত্র ৩ দিন আগে গরুর শরীরে চামড়ার নিচে কয়েকটি ছোট ফোঁড়ার মত উঁচু দেখতে পাই। পরে পুরো শরীর জুড়ে গোটা গোটা দেখতে পাই। গরু যখন খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তখন পশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার গরু দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়।
রাজ্জাকুল মনির নামে এক প্রান্তিক চাষী জানান, আমার গরুর বয়স ২ বছর। হঠাৎ একদিন সকালে গরুর মুখ দিয়ে লালাসহ ফেনা জাতীয় বের হতে থাকে। বিকেল হতে না হতেই গরুর সমস্ত শরিরে গোটা গোটা উঁচু হয়ে উঠতে থাকে। তৎক্ষনাত গরুটি পশু হাসপাতালে নিয়ে আসি।
লাম্পি রোগের কারণে উপজেলায় গরু মারা যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে পশু পালনকারীরা। অনেকের গরু যেমন চিকিৎসায় ভালো হয়েছে তেমনি মারাও গিয়েছে অনেকের। দেখা যায় ভ্যাটেনারি ফার্মেসিতে লাম্পি রোগে আক্রান্ত পশুর ওষধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। গর্ভকালীন পশু নিয়ে লাম্পি রোগের চিকিৎসা দিতে অনেক পল্লী পশু চিকিৎকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ধুনট উপজেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান জানান, আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশা-মাছির উপদ্রব কমিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রান্ত গরুর খামারের শেড থেকে আলাদা করে অন্য স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখলে অন্য গরুতে সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সময়মত চিকিৎসা না নিলে লাম্পি রোগের কারণে পশুর মৃত্যুও হতে পারে। প্রতিদিন পশু পালনকারীরা লাম্পি রোগের পরামর্শসহ চিকিৎসা গ্রহণ করছে। আমাদের তরফ থেকে সেবাদানে কোন ত্রুটি নেই। তবে পশু পালনকারীদের অবশ্যই ডাক্তারী পরামর্শ অনুযায়ী সচেতন হতে হবে।
টিএইচ