প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে মাছ মাংসের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ডালজাতীয় ফসল। নানা ধরনের ডালজাতীয় ফসল রবি মৌসুমে আবাদ করে কৃষক। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেসারি, মসুর, মাষকলাই, মুগ। মাষকলাই ডাল সহজে হজম হয় এবং এতে প্রচুর আমিষ রয়েছে। মাষকলাই ডালের পুষ্টিগুণ নানাবিধ। যেমন খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি।
উত্তরবঙ্গে আমবাগানে বাড়তি ফসল হিসেবে মৌসুম শেষে অক্টোবর মাসের দিকে স্বল্পকালীন ফসল হিসেবে মাষকলাই আবাদ বেশ জনপ্রিয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় ওই ফসল বিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে নতুন সৃষ্ট কয়েকটি আমবাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে প্রথমবারের মতো আবাদ হয়েছে মাষকলাই।
নবীনগর উপজেলায় মাসকলাইয়ের বীজ ডাল হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাইয়ের রুটিও তৈরি হয় মাষকলাই ডাল থেকেই। তাছাড়া আতিথেয়তার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে মাষকলাই ডালের চাহিদাও রয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। মাষকলাই চাষে খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। ফলে খরচও তেমন বেশি হয় না। যার ফলে অল্প খরচে বাম্পার ফলন এবং অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন এ উপজেলার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় এবারে প্রায় ২১০ হেক্টর মতো মাষকলাই আবাদ হয়েছে। কিন্তু ফলবাগানে মাষকলাই আবাদের উদ্যোগ উপজেলা কৃষি অফিসারের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নেয়া হয়। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সাতমোড়া ইউনিয়ন, শ্রীরামপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে মাষকলাই। গাছের ফাঁকে মাসকলাইয়ের পরিপক্কতা জানান দিচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি সপ্তাহে মাষকলাই উত্তোলন করা হবে। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে অল্প উৎপাদন খরচে নতুন একটা ফসল প্রাপ্তির সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। সাতমোড়া গ্রামের কৃষক সোহেল রানা জানান, আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে বাড়তি ফসল হিসেবে প্রথমবারের মতো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সফুরুল্লাহর পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করি মাষকলাই। এই ফসল চাষে অধিক পরিচর্যার ঝামেলা নাই। আবার অল্প খরচে, অল্প সময়ে আয় আসে। তাই গত বছর থেকেই মাষকলাই চাষ শুরু করেছি।
শ্রীরামপুর ইউনিয়নের দড়িশ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা জানান, বছরখানেক হলো আমবাগান করেছি, এখনো ফলন আসেনি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের পরামর্শে আমবাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাষকলাই আবাদ করি। মাত্র ৬০-৬৫ দিনে এই ফসল উত্তোলন করা যায়, তেমন কোনো খরচ লাগে না বাড়তি ফসল হিসেবেই পাওয়া যায়। আমার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমি এই মাষকলাই উত্তোলন করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সাথী ফসল সরিষা আবাদ করবো।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, নবীনগর উপজেলায় মাষকলাই জাত হিসেবে বারি মাস-১, বারি মাস-২, বিনা মাস-৪, বিনা মাস-৪, বিনা-৫ খুব জনপ্রিয়। মাষকলাই আবাদে বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে ৪-৫ মণ পর্যন্ত কলাই উৎপাদন হয়ে থাকে। মাষকলাই বাজারে ৩-৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হয়। সেই হিসেবে অল্প সময়ে লাভজনক ফসল হিসেবে এই ফসলের গুরুত্ব বাড়বে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উত্তরবঙ্গের এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের শুরু থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তাদের বীজ, সার এবং সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হয়। যেহেতু প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে প্রচলিত ছিল, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকদের বাড়তি একটি আয়ের সংস্থান করা।
আমরা আশা করছি প্রতি বিঘা থেকে ৪ থেকে ৫ মণ মাষকলাই উৎপাদন হবে। নবীনগর উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টরের মতো মিশ্র এবং একক ফল বাগান রয়েছে সেগুলোতে গাছের ফাঁকে মাষকলাই চাষে আগামী মৌসুমে আরও বেশি কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ করা হবে।
টিএইচ