সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর। তিনি ১৬ শতক পতিত জমি ইজারা নিয়ে প্রথমে কিছু বনজ ও ফলজ চারা দিয়ে নার্সারির যাত্রা শুরু করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও বীজ সংগ্রহ করেন।
তার নার্সারিতে এখন দেড় শতাধিক বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা আছে। এই নার্সারিতে তার কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আর্থিক সংকটের কারণে কালিগঞ্জ এনজিও সংস্থা থেকে দশ হাজার টাকা ফ্রি কৃষি ভর্তুকি পায়।
এরপর তার নার্সারির ব্যবসা নতুনভাবে মোড় নেয়। ওই টাকা দিয়ে তিনি আরও বেশ কয়েক পদের কৃষি গাছ যুক্ত করেন। এভাবে তার ব্যবসার প্রসার দিন দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে কৃষক আব্দুল গফুরের কৃষি নার্সারি খামারের জমির পরিমাণ ৯ বিঘা।
তিনি এই কৃষি নার্সারি খামার থেকে বাৎসরিক আয় করেন ১১ লাখ টাকা। উপজেলাব্যাপী কৃষক আব্দুল গফুর এখন ‘কৃষি মানব’ নামে পরিচিত। জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া বুড়ির মোড় সংলগ্ন (কালীগঞ্জ- আশাশুনি) সড়কের পাশেই তার কৃষি নার্সারি খামারটি।
দেশে করনাকালীন সময়ের আগে কালিগঞ্জ উপজেলা বৃক্ষমেলার শ্রেষ্ঠ কৃষি নার্সারি খামার পুরস্কারপ্রাপ্ত হন পরপর ২ বার এবং আশাশুনি উপজেলা বৃক্ষমেলায় শ্রেষ্ঠ কৃষি নার্সারি খামারির পুরস্কার প্রাপ্ত হন ১ বার। তার কৃষি নার্সারি খামারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পদের কৃষিজ, ফলজ, বনজ এবং ঔষধি জাতের সব মিলিয়ে লক্ষাধিক নার্সারি চারা রয়েছে।
ওই নার্সারি থেকে গাছ কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী উপজেলা আশাশুনি, শ্যামনগর, দেবহাটা, খুলনার তেরখাদা উপজেলা থেকে থেকে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, অন্য নার্সারির তুলনায় এই নার্সারিতে দাম কম ও ভালো মানের চারা পাওয়া যায়। এজন্য আমরা এখান থেকে সব সময় চারা কিনে থাকি। তার নার্সারি থেকে ভারতের বারাসাত, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা নার্সারি চারা ক্রয় করে থাকেন।
কৃষক আব্দুল গফুর জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় অথবা জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অফিস থেকে যদি সরকারিভাবে সহজ শর্তে ভর্তূকি পাওয়া যেত তাহলে আরো ব্যাপক পরিসরে আমার এই কৃষি নার্সারি খামারটির পরিধি বাড়ানো যেত। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর সরকারি বিভিন্ন দিবসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকশ কৃষি কাজ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছি। সামনে আরো করবো।
কালিগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র কৃষি অফিসার অসীম বিশ্বাস জানান, নার্সারি খামার করে আব্দুল গফুর এখন অনেক সচ্ছল। আমার পক্ষ থেকে নিয়মিত কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষক আব্দুল গফুরের কৃষি নার্সারির সুখ্যাতি শুনে পরিদর্শনে আসেন, ২০০১ সালে দেশে সর্বপ্রথম বাউকুলের উদ্ভাবক ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. আব্দুর রহিম। নার্সারি পরিদর্শন করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
টিএইচ